প্রিয়
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
কোলকাতা।

দাদা,
প্রণাম নেবেন। আমি নিয়মিত আপনার লাইভ আলোচনা শুনছি। আমাদের বাংলাদেশের বহু মানুষ আপনার লাইভ উপভোগ করেন। আমি বিস্মিত হই, করোনার মতো একটি ভয়ঙ্কর ইস্যুকে আপনি শুধু রোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা পৃথিবীর অতীতের সাথে বর্তমানের মিশেল দিয়ে একটি সুন্দর আগামীর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আপনাকে আমি স্যালুট জানাই!

আজ প্রথমে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের অবদানের কথা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আপনাদের ঋণ আমরা বাংলাদেশীরা কোনও দিনই শোধ করতে পারবো না। সেই আলোকেই আপনার সামনে আজ একটি বিষয়ের অবতারণা করছি, যেটি ভারত ও বাংলাদেশের জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই আমি মনে করছি।

আপনি একটি বিষয় ইতোমধ্যেই জেনেছেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্ধর্ষ খুনি ও ওই খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন মাজেদ ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছেন ও তার ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে। খবরটি সকলের জন্য স্বস্তির হলেও, নেপথ্যের খবরে বাংলাদেশ ভারত, উভয় দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য সেটি বড় হুমকির। নেপথ্যের খবরটি হল, বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ টানা ২০/২২ বছর আপনাদের দেশের কোলকাতায় বসবাস করছিলেন। কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন একজন ভারতীয় হিসেবেই! এই খবরটি আমাকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। সেখানে খুনি মাজেদের পরিচয় আহমেদ আলি হিসেবে। সেখানে তিনি সেলিনা বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেছেন। তাদের ৬ বছরের কন্যা সন্তানও রয়েছে। সেই আহমেদ আলির রয়েছে আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, রেশন কার্ড ও ভারতীয় পাসপোর্ট। সেই সাথে কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় ছিল তার নাম! BPL তালিকা তথা Below Proverty Line তালিকায় যাদের নাম থাকে, তারা দরিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবার; সেইসব পরিবার ভারত সরকারের কাছ থেকে পায় নানান আর্থিক সুবিধা! তিনি পাশের তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন! অথচ সেখানে তার আয়-রোজগারের উৎস ছিল শুধুই প্রাইভেট টিউশনি!

আমার কাছে বিস্ময় লাগে, একজন হাই প্রোফাইলের খুনি হয়েও কী করে কোলকাতায় নিরাপদে লুকিয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ! সে কী করে ভারতের নাগরিক হিসেবে আধার কার্ড, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড ও ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেন! কী করেই বা তিনি কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় তার নাম ওঠান! এর সবই আমার কাছে বিস্ময়! আমি ভারতকে শুধু এই উপহাদেশের স্থিতিশীলতা ও স্বস্তির জন্যই অনিবার্য মনে করি না, তেমনটিই মনে করি বিশ্বের প্রেক্ষাপটেও। সেই ভারতে এমন একজন ভয়ঙ্কর খুনি ভারতীয় পরিচয়ে, ভারত সরকারের নানা আনুকুল্যে বসবাস করে, সেটা ভাবতেও ভয়ে আতঙ্কে আমার গা ছম ছম করছে। তাহলে কী এমন আরও বহু অভারতীয় এভাবেই লুকিয়ে আছে ভারতে? বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের ভারতীয় হয়ে ওঠার নেপথ্যে আপনাদের দেশের এক কিংবা একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা চক্র জড়িত, এতে আমার কোনও সন্দেহ নেই!

আমি আপনার মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে গুরুতর এই বিষয়টি তদন্ত করে দেখার বিশেষ আবেদন করছি। কেননা এই বিষয়টিকে আমি ভারতের নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই বিবেচনা করি। সব মিলিয়ে স্থিতিশীল ভারত এই উপমহাদেশের জন্য তথা বিশ্বের জন্যই এক অনিবার্য উপকরণ।

সবশেষে আমি আপনার ও ভারতের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ-ভারতের অকৃত্রিম বন্ধুত্বের চির স্থায়ীত্ব কামনা করে আজকের মতো শেষ করছি।

ইতি
আপনার নিত্য শুভার্থী
প্রবীর সিকদার
সাংবাদিক
ঢাকা, বাংলাদেশ
১৫ এপ্রিল, ২০২০