স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম বলেছেন, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অচ্ছুৎ কেউ নন। যে কেউ যেকোনো সময় এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’- এটি মনে রেখে করোনা আক্রান্তদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে। করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের অনেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

বৃহস্পতিবার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ব্যাপক সংক্রমণ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশও ক্রমাগত সংক্রমণে এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন।

বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত থেকে এটি প্রতীয়মান যেকোনো দুর্যোগ, বিপর্যয় বা মহামারীতে নারী-শিশু, প্রতিবন্ধী এবং হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠী অধিকতর ঝুঁকি বা দুরবস্থায় থাকেন। করোনাভাইরাসের এই সংকটকালীন সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে সকলে একসঙ্গে ঘরে থাকার কারণে নারীকে অধিকাংশ সময়ই রান্না ঘরে কাটাতে হয়। পরিবারে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেবা শুশ্রূষার দায়িত্বটিও অবধারিতভাবে নারীকেই পালন করতে হয়। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ পুরুষ সদস্যই গৃহস্থালি কাজে নারীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন না।

অপরদিকে, লকডাউনের ফলে দিনমজুর শ্রেণির কোনো কর্ম না থাকায় তাদের প্রত্যেককে তালিকাভুক্ত করে ত্রাণ বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অনুশাসন সত্তেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটছে যা কাম্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ত্রাণ বিতরণের সময় জনসমাগমের ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। কমিশন মনে করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দিনমজুর এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি এবং অসহায় নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধী, হিজড়াসহ অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের বাড়িতে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া এখন সময়ের দাবি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী, ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা এগিয়ে আসছেন তাদের সকলকে কমিশন সাধুবাদ জানায়।

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নাছিমা বেগম বলেন, করোনার এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও নারী এবং শিশুদের পারিবারিক সহিংসতার পাশাপাশি বিভিন্ন যৌনবিকৃত মানুষের দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে। কমিশন আরো লক্ষ্য করছে করোনা আক্রান্ত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের অনেকে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না; বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

কমিশন মনে করে, এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক অভিযোগ গ্রহণ সম্পর্কিত হটলাইন সার্ভিসসমূহ চালু রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা ও আইনগত সেবা নিশ্চিতকরণসহ করোনা রোগীর চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা আক্রান্ত রোগীরা অচ্ছুৎ কেউ নন। যে কেউ যেকোনো সময় এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। সুতরাং ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’- এটি মনে রেখে করোনা আক্রান্তদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে। কমিশন তাদের দ্রুত রোগ মুক্তির প্রার্থনা করে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ডাক্তারসহ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রত্যেকের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে কমিশন।

কমিশন সকল পিতা-মাতা এবং অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে করোনার এই বৈশ্বিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করার অনুরোধ জানাচ্ছে। কমিশন মনে করে জাতীয় এই মানবিক দুর্যোগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সকলে ঘরে থাকবো, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবো।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২০)