প্রবীর সিকদার


পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা শহরে প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার বাংলাদেশির পদচারণা, কেউ ডাক্তার দেখাতে, কেউ মার্কেট করতে,কেউ বা ঘুরতে আসেন। অথচ সেই কোলকাতা শহরেই দীর্ঘ ২২ বছর বসবাস করেছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ; কারো নজরে পড়েনি! কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন খুনি মাজেদ, আহমেদ আলি নামের পরিচয়ে!

সেখানে তিনি বিয়ে করেছেন, সন্তানের জনকও হয়েছেন! তিনি পাশের তালতলা এলাকায় ২৫ লাখ টাকায় একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন! ফ্ল্যাটে ওঠার আগেই তাকে বাংলাদেশে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে, সেটা কে জানতো! সেখানে ইংরেজির প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে তার যে আয়-রোজগার, তা দিয়ে ২৫ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট কেনা অসম্ভব! শুধু সেখানকার মানুষ নয়, এখন বাংলাদেশের মানুষেরও ধারণা, মাজেদ তথা আহমেদ আলি বাংলাদেশের এক কিংবা একাধিক উৎস থেকে টাকা পেতেন; নইলে কোলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়!

বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ তথা আহমেদ আলি কোলকাতায় বাস করতেন ভারতীয় হিসেবেই। তার ছিল আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড ও ভারতীয় পাসপোর্ট। সেই সাথে কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় ছিল তার নাম! BPL তালিকা তথা Below Proverty Line তালিকায় যাদের নাম থাকে, তারা দরিদ্র সীমার নিচে থাকা পরিবার; সেইসব পরিবার সরকারের কাছ থেকে ও মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন বেশ আর্থিক সুবিধা! যেখানে খোদ ভারতীয় নাগরিককেরাও সেই তালিকায় নাম ওঠাতে পারেন না, সেই তালিকায় বাংলাদেশি এক দুর্ধর্ষ খুনির নাম রয়েছে, সেটা ভারতীয়রা কী স্বপ্নেও ভাবতে পারেন?

ভারতীয়দের চোখ ছানাবড়া করতে আমি আহমেদ আলি তথা বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে কথা বলবো। পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেন, আমার এমন অনেক আত্মীয় মাঝেমধ্যেই বলে থাকেন, পাসপোর্ট করা এক কঠিন ও জটিল কাজ! ভারতীয়রা যে কাজটিকে কঠিন ও জটিল বলেন, সেটিই খুব সহজে করে দেখিয়েছেন বাংলাদেশের এক দুর্ধর্ষ খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ তথা হালের ভুয়া ভারতীয় নাগরিক আহমেদ আলি! আমার হাতে এসেছে সেই পাসপোর্টেরও ফটোকপি! বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদের ভারতীয় পাসপোর্টের নম্বর R 0465602! পাসপোর্টে তার নাম আহমেদ আলি, পিতার নাম মো.আলি; তার জন্মস্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে হাওড়া। এখানে বলে রাখা আবশ্যক মনে করছি যে, বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ নিজের নাম পাল্টালেও পাল্টাননি বাবার নাম! তার বাবার নাম বাংলাদেশে মো.আলি এবং ভারতেও মো.আলি! ২০১৭ সালের ২৪ মে ওই পাসপোর্ট ইস্যু করে কোলকাতা পাসপোর্ট অফিস। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর; মেয়াদ শেষ হবে ২০২৭ সালের ২৩ মে!

বলে রাখা জরুরি যে, যেখানে খোদ ভারতীয়রা পাসপোর্ট করতে হিমশিম খান, সেখানে বাংলাদেশের নাগরিক ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন মাজেদ আসল পরিচয় গোপন করে ভারতীয় হিসেবে আহমেদ আলি নামে পাসপোর্ট পেয়ে যান, সেটা শুধু বিস্ময়েরই নয়, অবিশ্বাস্যও বটে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি সেই বিস্ময়কর ও অবিশ্বাস্য কাজ নিজে করে দেখিয়েছেন! সেখানে পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশনের কাজটি যে কতো জটিল, সেটি শুধু ভারতীয়রাই জানেন! এক কিংবা একাধিক প্রভাবশালী ভারতীয় ব্যক্তি কিংবা চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা ছাড়া এমন অসাধ্য সাধন অসম্ভব,এটি উপলব্ধির জন্য কোনও বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয় না, আম জনতাও সেটা বোঝেন! নইলে আধার কার্ড ভোটার আইডি কার্ড রেশন কার্ড পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়া এবং কোলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের BPL Household তালিকায় নাম ওঠানো সম্ভব নয়! কে কিংবা কারা সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা চক্র, সেটা ভারতীয়দের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। এমন একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ভারতের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি বলেই আমি মনে করছি। আমার ধারণা, ভারতে এমন বহু অভারতীয় দুর্বৃত্ত আহমেদ আলির মতোই নানা নামে ভারতীয় সেজে বসে আছেন! বঙ্গবন্ধুর খুনি বাংলাদেশী মাজেদের ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পার্কস্ট্রিটের আহমেদ আলি হয়ে ওঠার ঘটনা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে যে, শুধু ভারতীয় উপমহাদেশ নয়, বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য খুবই দরকারি দেশ ভারত আজ এক ভয়ঙ্কর রকমের নিরাপত্তা ঝুঁকি ও হুমকির মধ্যেই রয়েছে! ভারতীয়রা যতো দ্রুত এই সব হুমকি চিহ্নিত করে মোকাবেলা করবেন ও ধ্বংস করবে্ন, ততোই মঙ্গল ভারতের, বাংলাদেশের, তামাম দুনিয়ার।