প্রবীর সিকদার



শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এই আওয়ামীলীগের সরকারকে যে কতো অসঙ্গতি নিয়ে কতো বিভীষণ নিয়ে চলতে হয়, তার বুঝি ইয়ত্তা নেই! তৃণমূলে দল চালায় হাইব্রিড, ত্রাণ চুরি করে হাইব্রিড! এমনকি অনেক মন্ত্রী এমপিরাও বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করেন না; হয়ে যান টাকার সেবাদাস! প্রশাসনের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে জামায়াত বিএনপি তথা স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের চর, এজেন্ট। প্রশাসনের দিকে তাকালে বিশ্বাসই হতে চায়, টানা ১২ বছর দেশে চলছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকারের শাসন!

টানা ১২ বছর দেশ চালানোর পরও প্রশাসনের পরতে পরতে বিএনপি জামায়াত তথা স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের এজেন্ট সরকারে দাপটের সাথেই থাকবে, এটা বড় যন্ত্রণা ও বিড়ম্বনার। এরা যে ভেতরে থেকে সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে, সেটা আমজনতাও বুঝতে পারছেন; অথচ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সেটা বুঝতে পারেন না, সেটা মেনে নেই কী করে! অতি সাম্প্রতিক সময়ে করোনা মোকাবেলায় অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতার কারণে পোশাক কারখানার ৪০ লাখ শ্রমিকের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া, আবার ঢাকা মুখি হওয়া, তারপর আবার ফিরে যাওয়া, সে এক ভয়ঙ্কর তামাশা! স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মাস্ক পিপিইসহ জরুরি স্বাস্থ্য সেবা সামগ্রি কেনা নিয়ে যে তামাশা হয়েছে, সেটা ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হবে! আমি বিশ্বাস করি, এই সবই হয়েছে সারাদেশে করোনা ছরিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে বিপদে ফেলে নোংরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতেই! সবই হচ্ছে সরকারের ভেতর থেকেই! প্রশাসনে গুরুত্ব পূর্ণ চেয়ারে বিএনপি জামায়াতের এজেন্ট বসে থাকলে তো সেটাই হবে! এখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবের বিরুদ্ধে সরব ও কঠোর না হলে, ভয়ঙ্কর সর্বনাশা ঘটনাও ঘটতে পারে! এই প্রসঙ্গে আমি প্রশাসনের শীর্ষ পদ আঁকড়ে থাকা এক আমলার বিতর্কিত মাত্র একটি ঘটনার বিবরণ দিচ্ছি।

ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে প্রতি বছর সরস্বতী পূজা হয়। পূজায় প্রত্যেক বছর বের হয় স্মরণিকা। সেই স্মরণিকায় প্রত্যেক বছর শুভেচ্ছা বাণী দেন পদাধিকার বলে ক্লাব সভাপতি হিসেবে মন্ত্রী পরিষদ সচিব। এবারের সরস্বতী পূজায় স্মরণিকার জন্য শুভেচ্ছা বাণী আনতে পূজা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গিয়েছিলেন ক্লাব সভাপতি তথা মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে। কিন্তু তিনি বাণী দেননি! তিনি বাণী দিতে অস্বীকার করে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, ভিন্ন ধর্মের কোনও আচার অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়! পূজার আয়োজকেরা সেদিন কষ্ট ও হতাশা নিয়ে ফিরেছেন; এর আগে কোনও মন্ত্রী পরিষদ সচিব শুভেচ্ছা বাণী দিতে অপারগতা প্রকাশ করেননি! ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের ইতিহাসে এবারই প্রথম ক্লাব সভাপতি তথা মন্ত্রী পরিষদ সচিবের বাণী ছাড়াই স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে! এই ঘটনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়া যায় না! এমন ঘটনার ভেতর দিয়েই সরকারের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দেখা পাওয়া যায়।

ধর্মাচার ভিন্ন ধর্মের উৎসবের মঙ্গল কামনা করতে কিংবা শুভেচ্ছা বাণী দিতে বাধা দেয় কিনা, সেটা আমার জানা নেই! কিন্তু রাষ্ট্রাচার কখনোই বাধা দেয় না। বরং ভিন্ন ধর্মের উৎসবে শুভেচ্ছা বাণীর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত করে ভিন্ন ধর্মের মানুষকে শুভেচ্ছা জানান, করেন আপ্যায়িতও! মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম নিশ্চয়ই রাষ্ট্রাচারের বাইরের কেউ নন; তিনি দেশের সকল নাগরিকের সেবক, সোজা বাংলায় যাকে বলে দাস। নাগরিকের সেবক তথা দাস হিসেবে ইচ্ছা করলেই কাউকে শুভেচ্ছা জানাবেন, কাউকে বঞ্চিত করবেন, এই অধিকার তিনি সংরক্ষণ করেন না। এটি রাষ্ট্রাচারেরই নগ্ন লঙ্ঘন! এবার মন্ত্রী পরিষদ সচিব পূজার স্মরণিকায় শুভেচ্ছা বাণী না দিয়ে যে নজির স্থাপন করেছেন, সেটি তার সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ। এমন যে কতো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের আওয়ামীলীগ সরকারে গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে ঘাপটি মেরে বসে আছেন, তার বুঝি আর ইয়ত্তা নেই! এরাই সরকারকে প্রতিনিয়ত বিতর্কিত ও বিভ্রান্ত করছেন, করেই চলেছেন!

আমি বিশ্বাস করি, এখনও দেশ রক্ষা করতে ও দেশের মানুষ বাঁচাতে পারেন শুধুই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সময় নেই এক মুহূর্তও! এখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কঠোর থেকে কঠোরতর হতে হবে। তার পাশে থাকা বিভীষণরূপী জঞ্জাল সাফাই করতে হবে এখনই! শেখ হাসিনা যা বলেন, এই জঞ্জালেরা সূক্ষ্ম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ঠিক তার উল্টোটি করেন! ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সরস্বতী পূজা কেন্দ্রিক এই ছোট নজিরটি ভয়ঙ্কর সর্বনাশা কোনও ঘটনারই ইঙ্গিত দেয়! সময় আছে এখনো শুধরে নেওয়ার! অতএব সাধু সাবধান!