মানিক সরকার মানিক, রংপুর : ধান কাটা শ্রমিক না থাকায় করোনা ভাইরাসের ভয়কে উপেক্ষা করে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি অংশ কক্সবাজারে গিয়ে গৃহস্তের ধান কাটার পর এবার রংপুরের বিভিন্ন এলাকার ৫ হাজার কৃষি শ্রমিক একই কাজে রওনা হয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন হাওর অঞ্চলের জেলায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে রংপুরের অভাবি এলাকা গঙ্গাচড়া থেকে ৮০ জন কৃষি শ্রমিক রবিবার রাতে সরকারী বিশেষ ব্যবস্থায় কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রওনা হয়েছেন। মূলত ওইসব এলাকায় ধানকাটা কৃষি শ্রমিক না থাকার কারণেই তাদের ডাক্তারি পরীক্ষাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থায় এবং সরকারী খরচে তাদের পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক আশরাফ আলী।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে কৃষি শ্রমিককের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রতি বছর ধান কাটার মৌসুমে হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতে নিজ খরচে ধান কাটতে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন হাওর এলাকায় পাড়ি জমায়।

জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে ইতোমধ্যেই ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় পেরিয়ে যেতে বসলেও ধান কাটা শ্রমিকের অভাবে তারা ধান কাটতে পারছে না। অন্যদিকে এ অঞ্চলের কৃষকরা এ সময়টায় প্রতিবছরই ওই এলাকায় গেলেও এবার করোনার ঝুঁকি এবং পরিবহন সমস্যার কারণে ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না। ফলে বিপাকে পড়েছেন ওই অঞ্চলের কৃষক এবং গৃহস্থরা। এই অবস্থায় সেখানকার ধান কাটার কৃষক সংকট দুর করতে সরকারীভবে রংপুর থেকে শ্রমিক পাঠানোর এই উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ।

কারণ, রংপুর অঞ্চলের ধান কাটা মাড়াই শুরু হতে আরও অন্তত ২০/২৫ দিন সময় রয়েছে। আর এ সময়টাকেই কাজে লাগাতে সরকারের এ উদ্যোগ। জানা গেছে, গত শনিবার কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিজেই এখানকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালকের সাথে ফোনে কথা বলেন। এ সময় তিনি এখানকার কৃষকদের করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদে রাখা এবং নানা বিষয়ে প্রণোদনাসহ তাদেরকে উৎসাহিত করে সরকারী খরচে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন হাওর এলাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিকে রংপুর কৃষি বিভাগ এই সমস্যা দূরীকরণের জন্য রংপুর থেকে জরুরসী ভিত্তিতে কৃষি শ্রমিক পাঠানোর উদ্যোগ নেন।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, যেসব কৃষক গেছেন, তাদের প্রত্যেককে সিভিল সার্জনের দফতর থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিযে যে এলাকায় যতজন শ্রমিকের প্রয়োজন ততজনকেই স্থানভেদে নামানো হয়েছে।

কৃষি বিভাগের পরিচালক বিষয়গুলো স্বীকার করে আরও জানান, এবার তাদের সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এবার তাদের মজুরির পরিমাণও বাড়িয়ে দেয়া হবে।

(এমএস/এসপি/এপ্রিল ২১, ২০২০)