স্টাফ রিপোর্টার : রোজার শুরুতেই রাজধানীর বাজারগুলোতে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে যাবে-এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিছুদিন আগে যে কাঁচামরিচের কেজি ২০ টাকা ছিল তা রোজার শুরুতেই ১২০ টাকা হয়েছে।

আতঙ্কের মধ্যেও কাঁচামরিচের এমন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, একদিকে কাঁচামরিচের চাহিদা বেড়ে গেছে। অন্যদিকে সরবরাহ কমে গেছে। তাছাড়া হঠাৎ করেই বৃষ্টির দেখা দিয়েছে। এতে অনেক খেতের মরিচ নষ্ট হয়েছে। এর ফলেই দাম বেড়ে গেছে।

শনিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি করছেন। কেজি হিসেবে নিলে ১০০ থেকে ১২০ টাকা রাখা হচ্ছে। একই দামে কাঁচামরিচ বিক্রি হতে দেখা যায় খিলগাঁওয়ে।

তবে এসব অঞ্চলের কিছু কিছু ব্যবসায়ী ২০-২৫ টাকা পোয়াতেও কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন। এ হিসেবে তাদের মরিচের কেজি পড়ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে এসব মরিচের মান তুলনামূলক খারাপ। এমনকি কিছু পচা কাঁচামরিচও আছে এর ভেতরে।

রামপুরা ও খিলগাঁও অঞ্চলে ভালো মানের কাঁচামরিচের কেজি একশ টাকা ছাড়ালেও মুগদা ও মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারে ভালোমানের কাঁচামরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ ১০ দিন আগেও এসব বাজারে কাঁচামরিচ ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হতে দেখা যায়।

রামপুরা বাজারে ৩৫ টাকা পোয়া কাঁচামরিচ বিক্রি করছিলেন মালেক। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কারওয়ান বাজারে এখন ঠিকমতো বাজার বসতে পারে না। মাঝরাতে গিয়ে মাল কিনতে হয়, তারপরও ঠিকমতো মাল পাওয়া যায় না। রোজার কাঁচামরিচের দাম বাড়বে আগেই ধারণা করেছিলাম। তাই গতকাল ১৫ কেজি মরিচ এনেছিলাম। ৬০ টাকা কেজি হিসেবে সব গতকালই বিক্রি হয়ে গেছে। আজ আড়তে গিয়ে আমাদেরই কেনা পড়েছে ৬০ টাকার ওপরে।’

এই ব্যবসায়ী বলেন, রোজা ছাড়াও এবার কাঁচামরিচের দাম বাড়ার জন্য বৃষ্টিও দায়ী। কয়দিন ধরে বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে। এতে অনেক খেতের মরিচ নষ্ট হয়েছে। যে কারণে আড়তে মরিচ কম আসছে। আর আড়তে যে মালই কম আসে তার দাম এমনিই বেড়ে যায়।

খিলগাঁওয়ে ভ্যানেতে করে কাঁচামরিচ বিক্রি করছিলেন খায়রুল। তিনি বলেন, ‘আড়তে মরিচের ব্যাপক দাম। কিছদিন আগে যে কাঁচমরিচ আমরা ২০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, এখন আড়তেই সেই কাঁচামরিচ ৭০-৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে আমরা ২৫-৩০ টাকা পোয়া বিক্রি করছি। বাজারে তো কাঁচামরিচের দাম আরও বেশি। ৩৫-৪০ টাকার নিচে এক পোয়া পাবেন না।’

খিলগাঁও তালতলা থেকে কাঁচামরিচ কেনা আলেয়া বলেন, ‘গত সপ্তাহেও এক পোয়া কাঁচামরিচ ১৫ টাকা দিয়ে কিনেছি। আজ একজন ৪০ টাকা পোয়া চাইলেন। বাজার ঘুরে ৩৫ টাকা দিয়ে এক পোয়া কাঁচামরিচ কিনেছি। শুধু কাঁচামরিচ না, রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা থাকে তার সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে।’

রামপুরার বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘করোনা আতঙ্কের কারণ মানুষ বাইরে খুব একটা বের হচ্ছে না। এর মধ্যেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা থেমে নেই। একের পর এক পণ্যের দাম বেড়েই যাচ্ছে। একদিকে করোনা আতঙ্ক অন্যদিকে পণ্যের বাড়তি দাম। আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষ খুব কষ্টে আছে।’

মুগদার বাসিন্দা মো. শফিক। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও মুগদায় কাঁচামরিচ ২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোজার কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে।’

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০২০)