আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিম জং উনের রহস্যজনক অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করে উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগী এক নাগরিকের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় আহত হয়েছেন তিনি। গত ১৫ এপ্রিল দেশটির প্রতিষ্ঠাতা ও কিম জং উনের দাদা কিম ইল সাংয়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকায় উত্তর কোরিয়ার এই নেতাকে নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন ডানা মেলেছে।

হংকংয়ের স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের এক কর্মকর্তা কিম জং উন মারা গেছেন বলে টুইট করার পর উত্তর কোরিয়ার নেতার গণমাধ্যমে অনুপস্থিতির ঘটনা নিয়ে গুঞ্জন আরও জোরাল হয়। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি এনকের এক প্রতিবেদনে কিম জং উনের কার্ডিওভাসকুলার অপারেশনের পর তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়।

এই গুঞ্জনে ঘি ঢেলেছে উত্তর কোরিয়ায় চীনের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠানোর খবর। কিমের অসুস্থতা নিয়ে চারদিকে যখন গুঞ্জন শুরু হয়; তখন গত বৃহস্পতিবার ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পিয়ংইয়ং পৌঁছায়। তবে তার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গত কয়েকদিন ধরে এমন খবরের পর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় রোববার এক বিবৃতি জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন জীবিত এবং ভালো আছেন।

উত্তর কোরিয়ার সাবেক ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মকর্তা লি জিওং হো দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক ডং-এ ইলবোতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ১৪ এপ্রিল ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দিন পর্যন্ত যথেষ্ঠ সুস্থ ছিলেন কিম। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় আহত হয়ে থাকতে পারেন তিনি।

লি জিওং হো বলেছেন, যুদ্ধ বিমানের অনুশীলন ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রকাশিত ফুটেজে অনুপস্থিত ছিলেন কিম জং উন। যে কারণে পরীক্ষার সময় আগুন অথবা ধ্বংসাবশেষের আঘাতে অপ্রত্যাশিত কোনো দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

তবে হার্টের অপারেশনের কারণে কিম জং উন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন বলে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তার ব্রেইন ডেডের শঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন লি। তিনি বলেন, খবরে বলা হয়েছে, কিম জং উন মাউন্ট মিওহায়াং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু এটি সত্য নয়। কারণ কিমের চিকিৎসকরা পিয়ংইয়ংভিত্তিক। যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার আগে উত্তর কোরিয়ার মুদ্রা তৈরির রুম ৩৯ নামের বিভাগে কর্মরত ছিলেন লি।

কিমের শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যমেও কোনো ধরনের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়টিকেও অস্বাভাবিক হিসাবে দেখছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, কিমের শারীরিক অসুস্থতার খবরে পিয়ংইয়ংয়ে আতঙ্কিত লোকজনের কেনাকাটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

পিয়ংইয়ংয়ের আকাশে একেবারে নিচু দিয়ে অনবরত হেলিকপ্টার উড়ছে। সেখানকার আতঙ্কিত বাসিন্দারা চাল, মদ, সিগারেট, মাছ ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিকস পণ্য-সামগ্রী মজুদ করছেন। তবে দেশটির সরকারি দৈনিক রোডং সিনমুনে কিম জং উন সমুদ্রের পাশে রিসোর্ট নির্মাণের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে একটি বার্তা প্রকাশ পেয়েছে। এতে উত্তর কোরিয়ার এই নেতা যে জীবিত আছেন; সেটিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

দৈনিক রোডং সিনমুন বলছে, ওনস্যান শহরে রিসোর্ট নিমার্ণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতদের ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন কিম জং উন। তবে এই চিঠি আসলেই কিম পাঠিয়েছেন কিনা সেব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। স্যাটেলাইটে পাওয়া চিত্রে এই রিসোর্টে কিমের ব্যক্তিগত একটি ট্রেন দেখা গেছে।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০২০)