সিলেট প্রতিনিধি : চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে কৃষকদের নিকট হতে বোরো ধান ক্রয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হবে ও আগামীতে কৃষি কাজে সহায়তায় আরো বেশী সংখ্যায় কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন প্রদান করা হবে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শনি হাওরে বোরো ধান কাটা পরিদর্শন, কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের ত্রাণ সহায়তা বিতরণকালে কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জহাক এমপি উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

বুধবার বেলা ১টায় কৃষি মন্ত্রী পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপিকে সাথে নিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শনি হাওরে বোরো ধান কাটেন কৃষক ও কৃষি এবং শ্রমিকদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন।

এর পুর্বে জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বুধবার বেলা ১২টায় ধান কাটা পরিদর্শনকালে কৃষকদেও উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি মন্ত্রী বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের নিকট থেকে এ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার । লটারীর মাধ্যমে হাওরের প্রকৃত কৃষক বাচাই করা হবে। এবার ধান ক্রয়ে কোন অনিয়ম সহ্য করা হবেনা।

কৃষি মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিখাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশের খাদ্য উৎপাদনে হাওর এলাকার কৃষকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। করোনা সংকটের কারণে হাওর এলাকায় ধান কাটার শ্রমিকের সংকট দেখা দেয়ায় সরকার প্রশাসনের সহযোগিতায় বাইরের জেলা গুলো থেকে শ্রমিক হাওর এলাকায় নিয়ে এসেছেন। তারা স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাওরে ধান কাটার কাজ করেছেন। হাওরের ধান দ্রত কেটে নেয়ার জন্য কৃষকের ভুর্তুকি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সারা দেশে প্রায় ৪০০’শর অধিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটিতে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একেকটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ২১ লাখ টাকা ভর্ভুকি দিয়ে কৃষকদের দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

কৃষি মন্ত্রী আরো বলেন, হাওরে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে নিহত কৃষক ও কৃষি শ্রমিকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা সহযোগিতা করবে সরকার। তাদের পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি হলে ২ লাখ টাকা দেয়া হবে। কৃষিখাতকে গতিশিল রাখতে স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রণোদনা দেয়া হবে। যাতে কৃষক সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পারেন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা জানায় কোভিড- ১৯ এর সংক্রমনের কারণে বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। তাই ওই সব দেশে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এ শংকাকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা আওয়ামীলীগ সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। হাওর অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে প্রায় ৬৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। সুনামগঞ্জসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৭৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সরকারের নেয়া নানা তৎপরতায় কৃষকরা দ্রত সময়ে ধান কাটতে পেরেছেন।

ধান কাটা পরিদর্শনকালে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি বলেন, সরকার স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। এই দুটি খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে।

ধান কাটা পরিদর্শকালে সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এমপি সুনামগঞ্জ- ১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, সুনামগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার, সুনামগঞ্জ মো. মিজানুর রহমান, বিপিএম এব অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান (বিপিএম), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক মোহাম্মদ সফর উদ্দিন, তাহিরপুরের ইউএনও বিজেন ব্যানার্জী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ইউএনও জেবুন নাহার শাম্মী, সদর উপজেলার ইউএনও ইয়াসমিন নাহার রুমা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকমীরা উপস্থিত ছিলেন।

ধান কাটা পরিদর্শনকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহার সরুপ ধান কাটার জন্য দুটি কম্বাইন হারভেষ্টার মেশিনের চাবি কৃষকদের হাতে তুলে দেন কৃষি মন্ত্রী। পরে মন্ত্রী সদর উপজেলার লালপুর গ্রামে ধান সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন।

(এইচএস/এসপি/এপ্রিল ২৯, ২০২০)