স্টাফ রিপোর্টার : গ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আসা কর্মজীবী মানুষের তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানান, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের মধ্যে তারা ফিরে গেলে বাড়ি লকডাউন করা হবে, তাদের যেতে হবে কোয়ারেন্টাইনে।

রবিবার (৩ মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে করোনা পরিস্থিতিতে শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে চালু রাখা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এমন তথ্য জানান।

সভায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে পোশাক কারখানা পরিচালনার জন্য মালিকদের বলা হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

দিনদিন দেশে করোনার সংক্রমণের হার বাড়ছে। রবিবার (৩ মে) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস আরও দুজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৭ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও ৬৬৫ জন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। দেশে ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল নয় হাজার ৪৫৫ জনে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, অধিকাংশ স্থানে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কারখানাগুলো পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, এটি জাতির জন্য চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এমন প্রেক্ষাপটে আমরা কি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র বা ইতালির ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটাব, নাকি আসন্ন বিপর্যয় কাটাতে কৌশলী হবো? তারা এমনও বলছেন, এভাবে অবাধ চলাফেরা চলতে থাকলে ‘বিপর্যয় নিশ্চিত’।

‘সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১১ দিন বাড়ানো হচ্ছে। শ্রমিকরা কারখানায় ফিরলে করোনার তিন হটস্পট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে কি-না’— প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা এমন আশঙ্কার কথা জানালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একবার যারা ভেতরে চলে আসছে; ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে চলে আসছে, তাদের এখানেই থাকতে হবে। যে পর্যন্ত লকডাউন পিরিয়ড থাকবে বা যতক্ষণ পর্যন্ত না সংক্রমণ না কমবে বা একটা পিরিয়ড নির্ধারিত হবে, সেই পিরিয়ড পর্যন্ত তাদের ওই এলাকায়-ই থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বের হওয়ার জন্য বারণ করব। এবং কেউ যদি কোনো কারণে চলে যায়, আমরা সমস্ত জেলায় নির্দেশনা দিচ্ছি লিস্ট করে ফেলার জন্য। কারা গার্মেন্টস বা অন্যান্য শিল্পে কাজ করতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা অন্যান্য জায়গায় এসেছে তাদের তালিকা রাখবে স্ব স্ব জেলা। কেউ যদি ফেরত যায় তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাবে, তার বাড়ি লকডাউন করে দেবে। এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, পোশাক শিল্প-কারখানা কীভাবে আমাদের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি পালন করবে। এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে মূল ফোকাস, যেটা আমরা উনাদের বলেছি, ফ্যাক্টরি চালাবেন সেখানে যেন তারা কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলেন। স্বাস্থ্যসেবাটা যাতে আমাদের শ্রমিকরা পায়। তারা যেখানে কাজ করবেন সেখানে মিনিমাম যাতে একটা স্পেস মেইনটেইন করে কাজ করেন। তাদের পরিবহনটা যাতে সঠিক হয়। পরিবহনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়।’

‘তাদের (শ্রমিক) থাকার জায়গা, খাওয়ার জায়গা- এগুলোর বিষয়ে যেন তারা গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে তাদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। শ্রমিকরা আক্রান্ত হলে যাতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রাখেন, সেই ব্যবস্থা যেন তারা করেন।’

ফ্যাক্টরিতে ঢোকার সময় শ্রমিকদের স্যানিটাইজেশনটা ভালোমতো করতে হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনার তিনটি হটস্পট ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর- এ তিনটি স্থানকে ভালোভাবে দেখার জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি। এখান থেকে কেউ যাতে বাইরে না যায় ও ভেতরে না ঢোকে। সেই বিষয়ে বেশি নজরদারি করার জন্য বলেছি।’

পোশাক কারখানা অধ্যুষিত ওই তিন এলাকায় মালিকদের করোনা পরীক্ষার সুযোগ তৈরি করার জন্য বলা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘টেস্টের প্রয়োজন হলে তারা যাতে বেশি করে টেস্ট করতে পারেন। এ বিষয়টি তারা প্রতিপালন করবেন।’

‘সবচেয়ে বড় যে সিদ্ধান্তটা হয়েছে সেটা হলো, শিল্প বিশেষ করে গার্মেন্টসের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকটা মনিটর করার জন্য একটি কমিটি করা। ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করা। বিভিন্ন সাব-কমিটি করা।’

শ্রমিকদের পরিবহন একটি বড় সংকট, এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগের কিছু নাই। মালিকরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। তাদের আমরা পরামর্শ দিয়েছি, আনা-নেয়া, থাকা-খাওয়া সব বিষয়ে তারা যেন আরও সতর্ক হন। সংক্রমণ যদি বেড়ে যায় তাহলে আমরা কোথাও জায়গা দিতে পারব না।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সংক্রমণের জন্য হটস্পট, সেখানে সংক্রমণ বেশি হয়েছে। কীভাবে আমরা এ স্থানগুলোকে আলাদা করে রাখতে পারি, স্বাস্থ্য নির্দেশিকা যাতে সবাই মেনে চলতে পারে। একইভাবে যদি তারা (শ্রমিক) সংক্রমিত হয় তবে তাদের কীভাবে আইসোলেট করে থাকতে হবে। তারা আইসোলেশন সেন্টার করবেন তাদের জন্য হাসপাতাল নির্ধারণ করবেন। এবং টেস্ট ফ্যাসিলিটি কীভাবে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

সচিব বলেন, ‘বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সবাই আন্তরিক, তাদের স্বার্থেই সংক্রমণ মিনিমাইজ করতে হবে। সংক্রমণমুক্ত রাখতে হবে তাদের ফ্যাক্টরির স্বার্থেই। সেই চেষ্টাই তারা আরও বাড়তি ব্যবস্থা নেবেন।’

সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/মে ০৩, ২০২০)