স্টাফ রিপোর্টার : কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুড়িগ্রাম ছিল কুঁড়েগ্রাম। আমরা বলতাম কুঁড়েগ্রাম, চাইতেও জানে না। না রাস্তাঘাট, না কিছু। নদীতে পার হয়ে হয়ে যেতে হয়েছে। এখন তো ছয় ঘণ্টার মধ্যে চলে আসতে পারে, এ রকম ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। মঙ্গা যেন আবার ফেরত না আসে।

‘নদীর পাড় ধরে কয়েক মাইল পায়ে হেঁটে সেই চিলমারী পৌঁছেছিলাম। রাজীবপুর গেছি, একটা রিকশাও নাই, এমন অবস্থা। ওখানে যাওয়ার কিছু নাই। সেখানে ব্রিজ করে দিয়েছি’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আমারই আইডিয়া। আমি বলেছিলাম এটা করবো, এটা হয়ে যাবে। আইন পাস করে দেবো আমরা, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কুড়িগ্রাম খাদ্যে উদ্বৃত্ত, এটাই আমি খুব আনন্দিত। এটা ধরে রাখতে হবে। এখানে ফসল উপাদনটা বহুমুখী করতে হবে। চিলমারী বন্দরের কাজও আমরা শুরু করেছিলাম, এই করোনাভাইরাসের কারণে সব আটকে গেল। সেটাও হয়ে যাবে, নদীগুলো সব ড্রেজিং করা হবে। অনেক প্ল্যান নেয়া আছে।

‘আমি চাই কুড়িগ্রামের কুঁড়েমি দূর হয়ে কুড়িগ্রাম আরও উন্নত হোক। কুড়িগ্রামের মানুষ ভালো থাকুক। আর মঙ্গা যেন ফেরত না আসে’ বলেন সরকার প্রধান।

রংপুর অঞ্চল মঙ্গাপীড়িত ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সচ্ছল পরিবার ও প্রশাসনের উদ্দেশে বলেছেন, রংপুরে যেন মঙ্গা ফিরে না আসে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রংপুরকে আমি বিশেষভাবে বলে যাচ্ছি, যেহেতু এটা একটি মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল, এখানে যারা একটু সচ্ছল পরিবার আছেন বা আমাদের যারা প্রশাসন সকলকে আমি অনুরোধ করবো- এই এলাকায় যেন আবার মঙ্গা ফিরে না আসে। সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

ভি‌ডিও কনফারেন্সে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কুড়িগ্রাম এলাকা মানুষ পশ্চাৎপদ দুর্ভিক্ষ এলাকা বলে মানুষ জানে। আপনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে কুড়িগ্রামে যেভাবে কৃষি উন্নয়ন হয়েছে, আমরা কুড়িগ্রামের মানুষ নিজেদের খাদ্যে সংসম্পূর্ণ হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছি।

তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। কুড়িগ্রামের মানুষ না চাইতে আপনি অনেক কিছু করেন। কুড়িগ্রামের মানুষ অনেক সরকারের কাছে অনেক কিছু চেয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই কুড়িগ্রামের মানুষের কিছু দেয়নি। একমাত্র আপনি প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামবাসীকে যা দিয়েছেন তা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা বলেন, আমরা একটি লক্ষ্য নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। আমি জানি এটার প্রভাব পড়বে আগামীতেও। আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতিকে মহামারি ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম জাতি এর সুফল পেতে শুরু করেছিল হঠাৎ করে আঘাত আসলো। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে যেহেতু এটা এসেছে স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, সমস্যা আসবেই, আর তা মোকাবিলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করি। আমরা মনুষ্যসৃষ্ট সেই অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি। কাজেই এই করোনাভাইরাস দুর্যোগও আমরা ইনশাআল্লাহ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। এটা আমরা বিশ্বাস করি।

এদিনে তিনি দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জা‌নিয়ে বলেন, পবিত্র রমজান মাসে এবার একটু ভিন্নভাবে পালন হচ্ছে। কেন এভাবে পালিত হচ্ছে তা আপনারা সবাই জানেন। করোনাভাইরাস আমাদের মাঝে মহাবিপর্যয় হিসেবে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আপনারা আমার শহীদ বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন। এছাড়া আমি দেশবাসীকে আগাম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

(ওএস/এসপি/মে ০৪, ২০২০)