চৌধুরী আবদুল হান্নান


যার শুরু আছে তার শেষও আছে। করোনাকালও একদিন শেষ হবে। একটি অদেখা ক্ষুদ্র ভাইরাসের সাথে সমগ্র মানব জাতির চলমান এ মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলা আমাদের কোথায় নিয়েযাবে তা কেউ জানে না, অনুমানেও নেই। তবে এ মহামারী শেষে যারা জীবিত থাকবে, তারা ভয়াবহ খাদ্য সংকটে পড়বে তা সকলেরই আশংকা। বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আশংকাও করছেন অনেকে।

মহামারী শেষ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে এখনই ভাবতে হবে। বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ, নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপন্ন করতে সক্ষম। বেঁচে থাকার জন্য অনিবার্য খাদ্য-পণ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে।

দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে সরকার কৃষকদের জন্য এই জরুরি সময়ে কিছু করতে পারে।রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ৬০ টির মতো ব্যাংকের ১২ হাজারের অধিক শাখা বিস্তার করে দেশজুড়েকার্যক্রম পরিচালনা করছে।

যতটা জানি, প্রতিটি ব্যাংকের জন্য সারা বছর কৃষি খাতে বা শষ্য উৎপাদন খাতে কৃষকদের ঋণদেওয়ার জন্য একটি বরাদ্ধ থাকে। প্রতিটি শষ্য উৎপাদন মৌসুমে এ ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে।

এখনই ব্যাংকের শাখাগুলো কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে বর্তমানে বেসরকারি ব্যাংকগুলোও কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমান ঋণ দেওয়াআরম্ভ করেছে।অনেক ব্যাংককে কৃষি ঋণ বিতরণে টার্গেট পূর্ণ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেপুরস্কৃত করা হয়েছে যা প্রশংসনীয়, আশাপ্রদ।

ইতিমধ্যে করোনায় দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদিত কৃষি-পণ্য কৃষকের ক্ষেতেই পচে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বা বিক্রি করার ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

সরকার কৃষি এ কৃষক বান্ধব—তা কেবল ঘেষণায় না থেকে প্রমান করতে হবে। কৃষি-পণ্য প্রয়েজনে সরকারি ব্যবস্হাপনায় ক্রয় করে ভোক্তার কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করবে; সার,বীজসরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কৃষক কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ব্যাপক দুর্নীতির কবলেনিপতিত বাংলাদেশে কৃষক দুর্নীতিমুক্ত এক বিপুল জনগোষ্ঠী।

বাংলার কৃষক, যারা সকাল সন্ধ্যা ফসল উৎপাদনে ব্যস্ত থাকে, শিক্ষিত শহরবাসীর টেবিলেখাবার জোগান দেয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় বলেছিলেন—আমাদের উচিৎ কৃষকদের সালাম করা।

সরকার যেখানে কৃষকবান্ধব, সেখানে কৃষি ও কৃষকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান বাড়তিআগ্রহ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে—এ প্রত্যাশা সকলের।মনে রাখতে হবে, ওরাই আমাদের বেঁচেথাকার জন্য খাদ্যের জোগানদাতা এবং কৃষক যদি ভালো থাকে, আমরাও ভালো থাকবো।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।