মাইন সরকার


ভাইরাস হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র কণা বা অণুজীব যারা জীবিত কোষের ভিতরেই মাত্র বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ভাইরাস ল্যাটিন ভাষা হতে গৃহীত একটি শব্দ। যার অর্থ হলো বিষ। আদিকালে রোগ সৃষ্টিকারী যে কোনো বিষাক্ত পদার্থকে ভাইরাস বলা হতো। বর্তমানে ভাইরাস বলতে এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক অকোষীয় রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুকে বোঝায়।

করোনাভাইরাস বলতে ভাইরাসের একটি শ্রেণিকে বোঝায় যেগুলি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখিদেরকে আক্রান্ত করে। মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়।

"করোনা ভাইরাস " নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ করোনা থেকে যার অর্থ মুকুট বা হার। নভেল করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট এই রোগটি প্রথম চীনের উহান শহরে চিহ্নিত হয়। তখন রোগটির নামকরণ করা হয় করোনা ভাইরাস রোগ ২০১৯ যা ( কোভিট -১৯)। করোনা থেকে 'কে' ভাইরাস থেকে 'ভি' এবং ডিজিজ বা 'রোগ' থেকে 'ডি' নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত নামকরণ করা হয়। কোভিট- ১৯ হলো একটি নতুন ভাইরাস যা অতীতের সার্স ভাইরাস এবং কয়েক ধরণের সাধারণ সর্দি- জ্বর জাতীয় ভাইরাসের পরিবারভুক্ত। এই ভাইরাসটি যে কোনো দেশে এবং যে কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে সক্ষম।

কোভিট -১৯ এর অপর নাম হলো সামাজিক দূরত্ব। সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাসতন্ত্রের ফোঁটার মাধ্যমে এবং ভাইরাস দ্বারা দূষিত অংশ স্পর্শ করার মাধ্যমে এটি সংক্রমিত হয়। ভাইরাসটি বেশ কয়েক ঘণ্টা ভূপৃষ্ঠে বেঁচে থাকতে পারে, তবে সাধারণ জীবাণুনাশ এটিকে মেরে ফেলতে সক্ষম। এই ভাইরাসের লক্ষনগুলি হলো জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট। এই সংক্রমণের ফলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস-- প্রশ্বাসের অসুবিধা হতে পারে। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়। বর্তমান বিশ্বে কোভিট -১৯ এক বিশাল মহামারীর রুপ ধারণ করেছে। মহামারী মানে হলো যে সংক্রমক রোগে বহু মানুষের মৃত্যু হয়।

ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, গত তিশত বছর ধরে নীয়ম করে এই মহামারী গুলো হচ্ছে। যেমন- ১৭২০ সালের প্লেগ, যা ইউরোপে কয়েক শতাব্দী কাল ধরে টিকে ছিলো। তাই প্লেগ রোগকে ইতিহাস কালো মৃত্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
১৮২০ সালের কলেরা, যা প্রথম ধরা পড়ে থাইল্যান্ডে। এই জীবাণুটির কারণে এশিয়ায় এক লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ে ছিলো। বলা হয়ে থাকে দূষিত নদীর পানি খাওয়ার ফলে শুরু হয়েছিলো মহামারী কলেরা। আবার ১৯২০ সালের স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়ে ছিলো। এবং চীন থেকে শুরু হওয়া বর্তমান করোনা ভাইরাসটিকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্যানডেমিক বা অতিমারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই মহামারীটিও উল্লিখিত মহামারীগুলোর মতো একই ধারা অনুসরণ করে। প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসটি প্রকৃতি থেকে জন্ম নিয়েছে না মানুষের অণুজীববিজ্ঞান গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়েও বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। না ইতিহাস তার ধারাবাহীকতায় প্রতি একশ বছর পর পর নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে!

করোনার কড়াল থাবায় বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত।তবে থেমে নেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, তিনি লড়াই করেই চলেছেন, যা অনেক উন্নত রাষ্ট্রের জন্যও উদাহরণ। নানামুখী নির্দেশনা চলছেই তাঁর। নিয়মিত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন- কর্মহারাদের খুঁজে খুঁজে ত্রাণ দিতে হবে। আর নিউজে ঘাটলেই দেখা যায় বাংলাদেশে ত্রাণ আত্মসাতে প্রতিদিনই বরখাস্ত হচ্ছে জনপ্রতিনিধিরা অথচ তথ্য অধিদফতরের বিবৃতিতে বলা হচ্ছে ২ কোটি ৭৭ লাখ মানুষকে ত্রাণ দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশে শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ মানুষই হতদরিদ্র। এদিক দিয়ে ত্রাণের দাবিতে কর্মহীন মানুষের বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে, কারণ যে কোনো সংকট বা দুর্যোগে রাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া মানুষের অধিকার। রাষ্ট্র কোনো সম্পদ তৈরি করে না। মানুষের শ্রমে তৈরি সম্পদ মানুষকে বণ্টন করে দিতে ব্যবস্থা গ্রহর করে মাত্র। বলা হয় রাজনীতিকরাই আমাদের অভিভাবক। বিপদ আপদে তারা আমাদের পাশে থাকবেন এটাই জনপ্রত্যাশা, বর্তমান করোনা ভাইরাস সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত।

তবে বিশ্বের অনেক শক্তিশালী রাষ্ট্রের তুলনায় আমরা এখনও অনেক ভালো অবস্থানেই আছি। কারণ আমরা কৃষি প্রধান রাষ্ট্র, আমরা ফসল ফলাই আমরা উৎপাদন করি। করোনা মোকাবেলায় আমাদের জননেত্রীর ভূমিকা সত্যিই অতুলনীয় তবে কিছু ভণ্ড, বিকৃতরুচি পূর্ণ জনপ্রতিনিধি এদেশের ভাগ্য বিড়ম্বিত জনগনকে বাঁশ দিয়েই যাচ্ছে। দেশে এখন আকাল অসহায় কর্মহীন দরিদ্র মানুষের হাহাকারে দেশটা যেনো কুজু হয়ে আছে তবুও থেমে নেই ভণ্ড জনপ্রতিনিধিদের তালবাহানা।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেখানে দেশের ছাত্রলীগ যুবলীগ সক্রিয় ভূমিকায় দেশ পাহাড়া দিচ্ছেন। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে স্লোগানকে সামনে রেখে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন কিন্তু টাঙ্গাইলেন একজন জনপ্রতিনিধি এমপি সাহেবকে দেখলাম ছবি তুলার প্রয়োজনে কাটলেন কৃষকের ক্ষেতের কাচা ধান কারণ এই বিকৃত রুচিসম্পন্ন এমপি সাহেবেরও ছবি তুলা দরকার। এ যেনো রীতিমত ছবি তুলার প্রতিযোগিতা কিন্তু কৃষকের ক্ষতিপূরণ দেবার কেউ নেই। দেশের এই ক্লান্তিকালে যেনো বেড়ে গেছে কতিপয় জনপ্রতিনিধিদের তালবাহানা।

লেখক: কবি, গবেষক।