ইবি প্রতিনিধি : ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বেডে ১৬ দিন কাটিয়েছি করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এ কয়দিনে অনেক মানুষকে জীবন হারাতে দেখেছি। কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। হাল ছাড়িনি। আল্লাহর মহান কৃপায় আর নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় করোনা জয় করতে সক্ষম হয়েছি।

কথাগুলো স্থীর হয়ে শুনছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) করোনা জয়ী শিক্ষার্থী জায়েদের কন্ঠে। আবার ফোনের অপর পাশ থেকে ভেসে আসল জীবনযুদ্ধে হার না মানা জায়েদের সব করুণ স্মৃতিকথা।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক এক্স-রে, ব্লাড পরীক্ষা ও স্যাম্পল নিয়ে প্রেসক্রিপশন দিলে সেই অনুযায়ী ওষুধ সেবন করি। অধিকাংশ ওষুধই বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হতো। এরপর থেকে চিকিৎসক-নার্সরা তেমন খোঁজ-খবর নেয়নি। চিকিৎসকরা করোনার ভয়ে কাছে আসত না। আমাদের ওয়ার্ডের দরজার সামনে এসে কিছু কথা বলে চলে যেত। আমি গরম পানির ভাপ, সাথে আদা-লবঙ্গ-এলাচি খেতাম, গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে গর্গরা করতাম। এভাবেই আস্তে আস্তে আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে উঠেছি।

করোনাকে জয় করা এ শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সুস্থ হয়ে গত পরশু রাতে বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার গ্রামের বাাড়িতে স্বপরিবারে ফিরেছেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি।

জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ মার্চ ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণার পরই জায়েদ তার নানা বাড়ি ঢাকার টিকাটুলিতে বেড়াতে যায়। বেড়াতে গিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করে মানবতার সেবায়। মামার সাথে থেকে বিভিন্ন সংগঠনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন তিনি। এসময় তার মামার করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয়। টেস্ট করালে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তার।

কিছুদিন পরেই জায়েদের নানার (৮৮) লক্ষণ দেখা দিলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এসময় জায়েদ ও তার ছোট ভাইয়ের করোনা উপসর্গ দেখা দিলেও তা সেরে ওঠে। তবুও তারা কৌতুহলবশত গত ২০ এপ্রিল ঢাকার পিজি হাসপাতালে করোনা টেস্ট করেন। এসময় তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

পরে তাদের ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি ও তার নানা গত মঙ্গলবার রাতে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এক সপ্তাহ আগে জায়েদের ছোট ভাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.হারুন উর রশিদ আসকারী, বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিভাগের সকল শিক্ষক মুঠোফোনে খোঁজখবর রাখলেও করোনা প্রতিরোধ সেল কোনো খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন জায়েদ।

করোনাকালীন সময়ে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষার সময় থেকে সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। চিকিৎসা সেবায় খামখেয়ালীভাব ও যত্নহীনতার ছাপ লক্ষ্য করেছি। নমুনা পরীক্ষায় গরমিল লক্ষ্য করেছি। এছাড়া একজন করোনা রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগেই তাকে কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিচ্ছেন। এতে করে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে অন্যের সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েই যাবে।

এদিকে বাড়িতে গিয়ে বর্তমানে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন জায়েদ ও তার পরিবার।তাদের উপস্থিতিতে প্রতিবেশীরাও আতঙ্কিত হয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

(ওএস/এসপি/মে ০৯, ২০২০)