স্পোর্টস ডেস্ক : ভাল খেলা, ধারাবাহিকভাবে রান করা এবং পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরলে তিনি সব ফরমাটেই বাংলাদেশের অন্যতম সফল ও সেরা ব্যাটসম্যান। কোন কোন ক্ষেত্রে তাকেই রাখা যায় শীর্ষে। রেকর্ড, পরিসংখ্যান তাই জানাচ্ছে।

কিন্তু জানেন কি তামিম ইকবালের মত অত বড় ব্যাটসম্যানেরও একটি বোধ-উপলব্ধি আসতে দীর্ঘ সাত-আট বছর লেগে গিয়েছিল। এ সাহসী, মেধাবী আর বড় ব্যাটসম্যানও ব্যাটিংয়ের এক কঠিন সত্য অনুভব করতে পারেননি দীর্ঘ দিন। তারপর একসময় গিয়ে মনে হলো, রানের মূল্য আসলে কত?

দেশের সেই এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালের সেই সত্য অনুভব ও উপলব্ধিটা জানা হলো আসলে লিটন দাসের সৌজন্যে। শনিবার রাতে অগ্রজপ্রতিম তামিম ইকবালের ফেসবুক লাইভে আড্ডার এক পর্যায়ে তামিমের কাছে লিটন দাস করেন এ সম্পর্কিত প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন আছে আপনার (তামিম) কাছে। অনেকদিন ধরেই জানতে চাই। সেটা হলো, যখন আপনি ভাল পারফরম করেন, ধরেন আগের ম্যাচে ১০০ করলেন, খুব স্বাভাবিক বিষয় হলো সেঞ্চুরি করা অনেক বড় ব্যাপার। মনের অজান্তেই একটা খুশি চলে আসে। পরেরদিন ব্যাটিংয়ে নামলে অন্য কারও হয় কি না জানি না, আমার চলে আসে। ভেতরে অনুভব হয় আমি আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছি। আমি মনে করি এটা খারাপ চিন্তা। এ চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় কী? এখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী? আবার নতুন করে শুরু করা যায় কীভাবে? এ ক্ষেত্রে মাইন্ডসেটটা কেমন দরকার?’

লিটন দাসের এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই তামিম ইকবাল বুঝিয়ে দেন, আসলে একটি ভাল ইনিংস তথা সেঞ্চুরির পর তার রেশ ধরে পরের ম্যাচ খেলতে নামার অর্থ হচ্ছে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। পরের ম্যাচে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। আগের খেলায় সেঞ্চুরি করেছি, এমন ভেবে খুশি মনে নির্ভার থেকে খেললে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবে বেশি।

তাই তামিমের সোজাসাপটা উচ্চারণ, ‘এক ম্যাচে সেঞ্চুরির পর পরের খেলায় অ্যাপ্রোচ কী হবে, সেটা বুঝতে আর ঐ বিষয়টা শুধরে নিতে আমারও ৭-৮ বছর লেগেছে। কারণ প্রথম সাত-আট বছর আমারও অনুভূতি হতো তোর মত। বার বার ভেতরে মনে হতো, আমি তো আগের ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছি। পরের ম্যাচে কী হবে আর না হবে, অত প্ল্যানও করতাম না। খেলতে নেমে পড়তাম, ব্যাটিং করার চেষ্টা করতাম। তখনই ভুলটা করতাম। আমরা সবাই জানি, একটি ছোট্ট ভুলেই কিন্তু আউট হয়ে যায় ব্যাটসম্যান।’

‘আমার কাছে মনে হয় যখন আমার খারাপ সময় আসছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে, তখন আমি রানের মূল্য বুঝতে শুরু করেছি। একটা ১০০ রানের ইনিংস আমার খারাপ সময় কভার করবে না। আমাকে নিশ্চিত করতে হবে যে আমাকে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে হবে, রান করতে হবে। একটা বড় ইনিংস খেলে লাভ হবে না। আমি যখন রান করবো, তখন তা ভুলে গিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।’

(ওএস/এসপি/মে ১৭, ২০২০)