নিউজ ডেস্ক : গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে ভবিষ্যতে আম্ফানের চেয়েও শক্তিশালী সাইক্লোন আসবে বলে আভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যত বাড়বে ততই বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান গেলেও এখনো স্তব্ধ উপকূলে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রকৃতির এমন তাণ্ডব শেষ কবে দেখেছিলেন তা মনে করতে পারছেন না কেউ। স্থানীয়ভাবে ঝড়ের প্রকোপ নয়, একের পর এক জেলা তছনছ করে এগিয়েছে আম্ফান।

আম্ফানের কারণে বৃহস্পতিবার (২১ মে) পর্যন্ত শিশুসহ সারাদেশে ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে যশোরে ১২, সাতক্ষীরায় দুই, ভোলায় দুই, পিরোজপুরে দুই, পটুয়াখালীতে তিন এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, সিরাজগঞ্জ ও চাঁদপুরে একজন করে রয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই মারা গেছেন গাছচাপা পড়ে।

কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে দেশে মোট এক লাখ ৭৬ হাজার সাত হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এসব জমিতে থাকা বিভিন্ন ফসলের ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।’

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে দেশের এক হাজার ১০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ, রাস্তা, ব্রিজ-কালভার্টসহ অবকাঠামোর পাশাপাশি ঘরবাড়ি, কৃষি ও চিংড়ি ঘেরসহ মাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাতক্ষীরার চার উপজেলার কমপক্ষে ২৬টিরও বেশি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ঘরবাড়ি। আম্ফানের প্রভাবে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের একাংশ নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ২১ জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব এখনো দেখার বাকি রয়েছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন যত বাড়বে তত বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা। যাতে আরও ঝুঁকি বাড়বে উপকূলে।

এক প্রতিবেদনে গবেষকরা বলছেন, ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট দেখা যায় সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়গুলো ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলেছে তারা। বিশেষ করে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বা তার বেশি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

তারা বলছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যত বাড়বে ততই বাড়বে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা।

পরিসংখ্যান অনুসারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতি সম্পন্ন ঝড়গুলির তীব্রতা গত ৩৯ বছরে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

শুধু তাই নয়, উষ্ণায়ণের জেরে শুধু ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগই বাড়বে না, বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণও। সঙ্গে ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের গতি কমছে বলেও দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। যার ফলে দীর্ঘ সময় সমুদ্রের ওপর থাকছে ঝড়। শোষণ করছে বেশি শক্তি।

গবেষকদের পর্যবেক্ষণ থেকে স্পষ্ট, আগামী দিনে আরও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে উপকূলের বাসিন্দাদের।

(ওএস/এসপি/মে ২২, ২০২০)