উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : ভারতের বিশিষ্ট রাজনীতিক জয়প্রকাশ নারায়ণ বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশ্ব-সফর শুরু করেন। তিনি এক বিবৃতিতে বিশ্বের সকল নাগরিক ও সরকারের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারকে সমর্থনদানের আহ্বান জানান।

লাতুতে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর ইপিআর বাহিনী অতর্কিত হামলা চালায়। প্রাণভয়ে বহুলোক শরিফবাড়ি মসজিদে আশ্রয় নিলে হানাদাররা মসজিদে নামাজ আদায়রত আ.মান্নান, আ. সালাম, আ.হাসেম মাঝি, আ. রাজ্জাক খান, ও আ. জব্বারসহ মোট ১৭ জনকে মসজিদ থেকে টেনে বের করে পুকুর পাড়ে বসিয়ে গুলি চালায়। এদের মধ্যে আ.রাজ্জাক খান ও নূরুল ইসলাম শরিফ ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান এবং বাকি সবাই শহীদ হন।

পিরোজপুরে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে কেএসপির সভাপতি এএসএম সোলায়মান মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

রংপুরে প্রাদেশিক সরকারের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি মওলভী আবদুল হোসেন মিয়া দেশকে রক্ষা করার জন্য পাকিস্থানি সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানান।

জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব চৌধুরী রহমত এলাহী নয়া আদমশুমারীর ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

জল্লাদ টিক্কা খান যশোর ও খুলনা সফর করেন এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালাচ্ছে তা যুক্তিসংগত বলে দাবি করেন।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান করাচিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে বিফলে যেতে দেয়া হবে না। স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবার সাথে সাথে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। ইয়াহিয়া বলেন, আমি বিশৃঙ্খলার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চাই না। যদিও আমার লক্ষ্য একটাই, আর তা হচ্ছে ক্ষমতা হস্তান্তর। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উচিত।

তিনি বলেন, সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তা একটি বিরাট রাজনৈতিক অভ্যুথ্থান। এ অভ্যুথ্থান দেশের পূর্বাংশে অহেতুক দৃর্দশা সৃষ্টি করছে। সুতরাং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় হাত দেয়ার পূর্বে আমার প্রধান কর্তব্য হলো পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আমি বিশ্বাস করি এরা নিরাপরাধ। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র বাহিনী কার্যকরভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের অনেক জনসাধারণ সীমান্তের ওপারে পালিয়ে গেছে এজণ্য আমি খুবই দুঃখিত। যেসব উদ্বাস্তু পাকিস্তানের অধিবাসী তাদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানানো হবে।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন, ৬ দফা পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় পাকিস্তানের আদর্শের বিরোধী। প্রদেশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণ ‘বাংলাদেশ’ করার ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমানের এ নয়া নামকরনের অন্তরালে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পরিকল্পনা ছিলো। ২৪ দিন ধরে শেক মুজিবুর রহমান একটি পাল্টা সরকার পরিচালনা করেছেন। আমি খোলা মন নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তিনি এতে আগ্রহ দেখাননি। তিনি দুই পরিষদ ও দুই শাসনতন্ত্রের দাবি করেন। তিনি আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা তার কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানান। পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতা আইনসম্মত করাই ছিল তাঁর এ দাবির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যে। শেখ মুজিবুর রহমান যখন এ উদ্দেশ্য সাধনে ব্যর্থ হলেন, তখন তিনি হিংসাত্মক পন্থায় তা করতে চেয়েছিলেন।

পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না। তাই আমি সামরিক কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তান রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ইয়াহিয়া খান বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দুঃখিত হয়েছেন এবং তিনি আমাদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

(ওএস/এএস/মে ২৩, ২০২০)