তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক : ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের (রবি-এয়ারটেল) ৫ কোটি গ্রাহক একসাথে ‘নগদ’-এ আর্থিক অন্তর্ভূক্তির ঘোষণা আসে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাহক সংখ্যায় ‘নগদ’ দেশের ১ নম্বর এমএফএস সেবা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিদিন অসংখ্য রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকেরা মাত্র দুই ধাপেই পিন সেট করে খুলে ফেলছেন ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুধাংশু শেখর ভদ্র বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তৈরির একটি জায়গা নির্মাণ করেছে এই চুক্তিটি। লেনদেনের ক্ষেত্রে রবি ও এয়ারটেল গ্রাহকদের জন্য এক নতুন ডিজিটাল সেবার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এই চুক্তির ফলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের (রবি-এয়ারটেল) গ্রাহকেরা বাংলাদেশে সবচেয়ে কম চার্জে লেনদেন এবং দেশের যেকোনো মোবাইল নাম্বারে টাকা পাঠাতে পারবেন। সাথে বিল, মার্চেন্ট ও ই-কমার্স পেমেন্ট এবং অন্যান্য সুবিধা তো থাকছেই।

‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘নগদ’যেমন বিশ্বাস করে মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, তেমনি বিশ্বাস করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য আর সম্মতির স্বাধীনতাও। ‘নগদ’ কেবল সে সব গ্রাহকের অ্যাকাউন্টই খুলছে, যারা ‘নগদ’- কে তারঁ তথ্য রবি আজিয়াটা লিমিটেডের (রবি-এয়ারটেল) কাছ থেকে সংগ্রহ করার সম্মতি দিয়েছেন। পরে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘নগদ’ সেটি নির্বাচন কমিশন কিংবা আরেকটি সরকারি পোর্টাল ‘পরিচয় ডট কমের’ মাধ্যমে যাচাই করে নিচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহককে তো জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি দিতেই হতো, এখন সেটা আর করা লাগছে না। ‘নগদ’ রবি আজিয়াটা লিমিটেডের (রবি-এয়ারটেল) সহযোগিতায় সেটি নিজ উদ্যোগে যাচাই করে নিচ্ছে। আর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হচ্ছে মাত্র ১০ সেকেন্ডে।

রবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫ কোটি রবি ও এয়ারটেল গ্রাহক ‘নগদ’-এ আর্থিক অন্তর্ভূক্তিকরণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এতে গ্রাহকেরা ডিজিটাল লেনদেন খুব সহজেই করতে পারবেন এবং জীবনধারার মান উন্নত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। অ্যাপ বা ইউএসএসডি-এর মাধ্যমে গ্রাহক নিবন্ধন প্রক্রিয়াতেই প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে খোলা হচ্ছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট।

এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়তে ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা অন্যতম এক সহযোদ্ধা। রবি’র ৫ কোটি গ্রাহক ‘নগদ’-এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে আসছে, এটা ডিজিটাল বিল্পবের ক্ষেত্রে অনন্য নজির স্থাপন করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখছেন, এই চুক্তিটাও সেই স্বপ্ন পূরণের পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেই আমার বিশ্বাস।

অন্যদিকে এসডিজি’র সাবেক মুখ্যসমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ মনে করেন, ‘এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি)' বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে থাকা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলছে, সেগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা আরও নিশ্চিত হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে মানবসম্পদই মুখ্য ভূমিকা রাখবে। সে জন্য বাংলাদেশ সরকারসহ দেশের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য।

রবি ও ‘নগদ’-এর চুক্তির ফলে গ্রাহক ‘নগদ’ অ্যাকাউন্ট খুলবেন কিনা এই স্বাধীনটি সম্পূর্ণই গ্রাহকের হাতে। এই উদ্যোগ দেশের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের জনগোষ্ঠীকে আর্থিক অন্তর্ভূক্তিতে আনতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে ‘নগদ’ সংশ্লিষ্টরা।

(ওএস/এসপি/মে ২৩, ২০২০)