দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় শিশু গৃহপরিচারিকার হাতের আঙুল ভেঙে দিয়েছে গৃহকর্তার ছেলে ও পুত্রবধূ
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় গৃহপরিচারিকা শিশু হামেদা খাতুন রাণীকে পিটিয়ে জখম করেছে এক প্রকৌশলী ও তার স্ত্রী। গত সোমবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহত গৃহপরিচারিকা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
আহত গৃহপরিচারিকা যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার গাঙ্গুলিয়া গ্রামের পাগলপ্রায় আব্দুর রশিদের মেয়ে।
তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারের চিকিৎসক ডাঃ বরকতুল্লাহ’র স্ত্রী রওশানাারা বেগম জানান, তার মেয়ে মাহফুজার বিয়ে দিয়েছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার গাঙ্গুলিয়া গ্রামে। পাগলপ্রায় বাবা ও মা না থাকা হামেদা খাতুন রাণী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো। অসহায় শিশুটিকে সে ছয় বছর আগে তার(রওশানারা) কাছে পাঠায়। সন্তানসম রানী তার হাতের কাজ করে দিত। একইসাথে তিনি রাণীকে পড়াশুনা করাতেন বাড়িতে মহিলা মাষ্টার রেখে। এবার সে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে।
রওশানারা আরো জানান, স্বামী বরকতুল্লাহ ঋ’শিল্পীতে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত। তার বড় ছেলে খালিদ সাইফুল্লাহ একজন প্রকৌশলী। ছোট ছেলে ডাঃ আব্দুল্লাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে চাকুরির সুবাদে ঢাকায় থাকেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে দু’ ছেলে ও পুত্রবধুগণ বাড়িতেই অবস্থান করছে দু’ মাস আগে থেকে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নামাজ শেষে বাড়ি আসে খালিদ। ডাক শুনে খালিদের স্ত্রী রানীকে দরজা খুলতে বলে।
দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুত্রবধু লাবণী ইট দিয়ে রানীকে আঘাত করলে তা তার বাম হাতের কনিষ্ট ও অনামিকা আঙুল ভেঙে যায়। পরে খালিদ এসে রানীকে আবারো মারপিট করে। রানীকে উদ্ধার করে সোমবার দুপুর পৌনে একটার দিকে সাতক্ষীরা সদর হসপাতালে ভর্তি করা হয়। রানী নাবালিকা ও কিছুটা অপ্রকৃতিতস্ত হওয়ায় পুলিশের কথামত তিনি বাদি হয়ে মঙ্গলবার বড় ছেলে ও পুত্রবধুর নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হামেদা খাতুন রানী বলেন, ভাবী লাবনী তার হাত ইট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছে। ভাইয়া খালিদ তাকে মারপিট করেছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সেলিম রেজা বলেন, রানীর বাম হাতের কণিষ্ট ও অনামিকা আঙুল ভেঙে গেছে। অর্থোপেডিকস সার্জন ডাঃ হাফিজুল্লাহ তার হাত প্লাস্টার করলে রানীকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
তবে গ্রেপ্তারকৃত খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ভালবেসে লাবণীকে বিয়ে করায় মা রওশানারা মেনে নিতে পারেননি। লাবণী ময়লার ঝুড়ি বাইওে ফেলার জন্য রানীকে দরজা খুলতে বলে। মায়ের কথামত দরজা খুলতে দেরী হওয়ায় রানীকে কয়েকটি চড় মারা হয়েছে। পরে ছোট ভাই ও তার স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে রানীকে মেরে হাতের আঙুল ভেঙে দিয়েছে। ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে ব৭াচাতে মা বাদি হয়ে তাকে ও লাবনীর নামে মামলা করেছেন।
পাটকেলঘাটা থানার উপপরিদর্শক জয় বালা জানান, এ ঘটনায় গৃহকত্রী রওশানারা বাদি হয়ে মঙ্গলবার ছেলে ও পুত্রবধুর নামে মামলা(৫নং) দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার রাতে খালিদ সাইফুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
(আরকে/এসপি/মে ২৭, ২০২০)