শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : করোনাকালে সুন্দরবনে সব ধরনের পর্যটকদের এই বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ সময়ে চুরি করে সেখানে ঘুরতে গিয়েছিল ছয় কিশোর। বুধবার সকালে বাগেরহাটের শরণখোলার উপজেলার ছয় কিশোর সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন এলাকার মধ্যে গিয়ে গহীন বনে পথ হারিয়ে ফেলে। সন্ধ্যা নেমে আসতেই শুরু হয় প্রবল বেগে বৃষ্টি। একদিতে তখন হিংস্র বাঘ ও কিং কোবরার ভয়ে বৃষ্টিতে উবুথবু হয়ে ওই ছয় কিশোর প্রাণে বাঁচতে গাছের ডালে উঠে পড়ে। সময় যতো বাড়তে থাকে ক্ষুদায় কাতর হয়ে তারা ফিরে আসার উপায় খুঁতে থাকে। এসময় এক কিশোর নিজের বুদ্ধিমত্তায় রাতে পুলিশের ৯৯৯ এ মোবাইল করে সুন্দরবনে তাদের পথ হারিয়ে যাবার কথা জানায়। ৯৯৯ থেকে সাথে সাথেই শরণখোলা থানা পুলিশকে সুন্দরবনে হারিয়ে যাওয়া ছয় কিশোরকে উদ্ধার করতে বলা হয়। এরপর রাতেই শুরু হয় পুলিশের উদ্ধার অভিযান। পুলিশ প্রায় ১৮ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে ছয় কিশোরকে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসে লোকালয়ে।

বনে পথভোলা ওই ছয় কিশোরের বাড়ি বাগেরহাটের শরণখোলার উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামে। ছয় বন্ধু মিলে সুন্দরবন দেখাতে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনর রাজাপুর এলাকা থেকে বনবিভাগের চোঁখ ফাকি দিয়ে তারা বনে ঢুকে পড়ে।

উদ্ধার হওয়া কিশোররা হল, দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের ইসাহাক খলিফার ছেলে জয় খলিফা (১৬), ফারুক খলিফার ছেলে সাইমুন (১৬), শহিদুল খলিফার ছেলে জুবায়ের (১৭) ও মাইনুল ইসলাম (১৯), জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আ. রহিম (১৭) ও রায়েন্দা বাজারের জাহাঙ্গীর হাওলাদারের ছেলে ইমরান (১৯)।

পুলিশ জানায়, বুধবার সকাল ১০টায় ওই ছয় কিশোর রাজাপুর এলাকা থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ পর তারা দিক হারিয়ে বনের গহীনে চলে যায়। পথ খুঁজে না পেয়ে সন্ধ্যা হলে তারা বনের বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয়। কিশোরদের মধ্যে রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাই স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী জয় খলিফা বুদ্ধি খাটিয়ে তার মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে বনে হারিয়ে যাওয়া এবং উদ্ধারে সহায়তা চায়।

এই তথ্য পেয়ে শরণখোলা থানা ও ধানসাগর নৌপুলিশ বনরক্ষী ও স্থানীয়দের নিয়ে সুন্দরবনে তল্লাশি চালায়। তারা মাইকিং করে কিশোরদের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করে। এরপর মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে ভোর ৪ টায় সময় তাদের উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ। এই ছয় কিশোর লোকালয় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার সুন্দরবনের গহীনে ঢুকে পড়ছিল বলে পুলিশ জানায়।

বুদ্ধিমত্তায় চয় বন্ধু মিলে বেঁচে যাওয়া মো. জয় খলিফা জানায়, তার সামান্য পানি ও চিপস নিয়ে বন দেখতে যায়। কিন্তু তারা পথ ভুলে যাবে তা ভাবতে পারেনি। খাবার-পানি শেষ হলে তারা ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে পড়ে। সন্ধ্যা নেমে আসতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়। তখন তাদের মধ্যে বাঘ ও কিং কোবরার আতঙ্ক দেখা দেয়। সবাই গাছের ডালে আশ্রয় নিয়ে ভিজতে থাকে। এরই মধ্যে তার মনে পড়ে ৯৯৯ এর কথা। তার মোবাইলে ব্যালেন্সও শেষ। কিন্তু সে জানতো ৯৯৯ এর সাহায্য পেতে মোবাইলে ব্যালেন্সের প্রয়োজন হয় না। তখন সে ফোন করে সহযোগীতা চায়।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ জানান, প্রায় ১৮ঘন্টা পর তাদেরকে সুন্দরবন থেকে কিশোরদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। সময় মতো উদ্ধার করতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। দুপুরে সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/মে ২৮, ২০২০)