স্টাফ রিপোর্টার : গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল।

তবে ঈদের পরই রংপুর, লালমনিরহাট, সিলেট ও রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেশ কিছু নেতা-কর্মী গ্রেফতার হওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শিবিরের সাবেক দুই কেন্দ্রীয় সভাপতি সিলেট মহনগরীর আমির অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও ঢাকা মহানগরীর সহকারি সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আটক হওয়ায় এই আতঙ্ক আরো তীব্র হয়েছে।

২০ দলীয় জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই সরকারের নির্দেশে গ্রেফতার তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে বলে মনে করেন জামায়াত নেতারা।

জানা গেছে, ঈদের পর কয়েক দিনে আটক হয়েছেন আত্মগোপনে থাকা দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাকর্মী। সম্প্রতি আদালত থেকে জামিনে মুক্তির সময় আটক হয়েছেন শিবিরের আরেক সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ফখরুদ্দিন মানিক। নতুন জামিনের আবেদন করতে গিয়ে জেলে গেছেন বেশ কয়েকজন নেতা। আন্দোলনের কথা মাথায় রেখে বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের যে মোবাইল নম্বর চালু ছিল শফিকুল ইসলাম মাসুদ আটক হওয়ার পর তা বন্ধ করে নতুন নম্বর নিয়েছেন অনেকেই।

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য বলেন, “২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে। তবে বিএনপির সহযোগিতা মূখ্য বিষয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে জোটের প্রধান বিএনপিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে জামায়াত পাশে থাকবে। কিন্তু জামায়াতকে দিয়ে যদি বিএনপি আগের মতো মাঠ পরিষ্কারের চেষ্টা করে, তাহলে জামায়াত সে আন্দোলনে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হবে না।”

জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ সূত্রমতে, ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের পাঁচ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩৩ হাজার মামলা দেয় পুলিশ। সম্প্রতি সারা দেশে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় দলের প্রচার বিভাগ। সামনের আন্দোলন আতঙ্কেই সরকার এই অভিযান চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন দলের নেতারা।

গ্রেফতার প্রসঙ্গে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “সরকার শক্তির জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যেই সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এর মাধ্যমে সরকার নিজেই দেশকে রাজনৈতিক অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”

জামায়াতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৩০ হাজার মামলা হয়েছে। আর নির্বাচনের পরে হয়েছে মাত্র পাঁচ হাজার। তাও আগের আন্দোলনের জেরে। নির্বাচনের আগে ৫০ হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন বলে দাবি করছে জামায়াত। আর নির্বাচনের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, “সরকার রাজনৈতিকভাবে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হীন উদ্দেশ্যেই গ্রেফতার করছে। এর মাধ্যমে সরকারের স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট চরিত্রই অত্যান্ত নগ্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই সারাদেশে আবার গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে।”

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ১২, ২০১৪)