স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন।কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে, কখনো নদীর পাড় কেটে,আবার কখনো আবাদী জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে,প্রভাবশালী এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল। এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে,ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। অন্যদিকে বালু বহনে নিয়োজিত বেপরোয়া ১০ চাকার ভারি ট্রাক এবং ট্রাক্টরগুলো প্রতিনিয়ত শব্দ ও পরিবেশ দূষণ করছে। ভেঙ্গে ফেলছে,রাস্তা-ঘাট।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও খানসামাসহ বিভিন্ন উপজেলাতে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে, বালু বহনে নিয়োজিত ১০ চাকার ভারি ট্রাক এবং ট্রাক্টর। করোনাভাইরাসের ক্লান্তি লগ্নেও লকডাউন মানছেনা, বালু ইজারাদার ও ট্রাক্টরের মালিকরা। বালু নিয়ে ট্রাক্টর বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে মানুুষ। প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ছাড়াও ট্রাক্টর চলাচল ও ভপু বাজানোর বিকট শব্দ আর বহণকৃত বালু কণা উড়ে চরমভাবে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও মহা-সড়কে চলাচলের জন্য অনুমোদিত ১০ চাকার ভারি ট্রাকগুলো গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে চলাচল করায় এসব রাস্তা ভেঙ্গে ও দেবে যাচ্ছে। এমননি অভিযোগ করেছেন, খানসামা উপজেলা চেয়ারমান মো হাতেম।

তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি তার এলাকায় বালুবাহী এই ১০ চাকার ভারি চলাচল যাতে না করতে পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।এনিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সভার আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে,যাতে বালুবাহী এই ১০ চাকার ভারি চলাচল যাতে না করতে পারে। কিন্তু,তারপরও দিব্যি বালু বহনে এই ১০ চাকার ভারি চলাচল করছে।

বীরগঞ্জ উপহেলার সহকারি ভুমি কর্মকর্তা মো রমিজ আলম সরজমিনে ঝাড়বাড়ি এলাকায় পরিদর্শন করে এই ভয়াবহ এই করোনা পরিস্থিতির লকডাউন মূহুর্তে অবৈধ পদ্ধতিকে বালু উত্তোলন ও বহনে বিধি নিষেধ জারী করেছেন। কিন্তু, তা মানছেন না বালু ইজারাদাররা।

পূণর্ভবা, আত্রাই, ধলেস্বর, গর্ভেশ্বর, ইছামতি, ছোট যমুনা, তুলাই, কাঁকরা, ঢেপাসহ দিনাজপুরের বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে, কখনো নদীর পার কেটে, আবার কখনো আবাদী জমি থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে, এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল।এতে নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে, ভাংছে, পাড়, নদীতে বিলিন হচ্ছে, ফসলী জমি, ঘর-বাড়ি ও গাছ-পালা। এমন অভিযোগ প্ররিবেশবাদী ও বিরল রানী পুকুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.ফারুক আযম।

তিনি বলেন, একারণেই শুস্ক মৌসুমেও জমে থাকা পানিতে গোসল করতে নেমে চোরা গর্ত ও বালুর খাদে পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকেই। জেলার কয়েকটি নদীতে গত ৫ বছরে এভাবেই প্রাণ হারিয়েছে,২৭ জন তরতাজা তরুণ-যুবক। শুধু তাই নয়, অবৈধ পদ্ধতিকে বালু উত্তোলণের ফলে মারাত্মক ভাবে বিপর্যয় ঘটছে, পরিবেশের।

জেলার বেশ কয়েকটি স্থানে নদী থেকে এভাবেই মেশিনের মাধ্যমে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। শুধু নদী থেকেই নয়; কোথাও নদীর পাড় কেটে, কোথাও নাম মাত্র টাকা দিয়ে, আবার কোথাও জোড়পূর্বক অন্যের ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

নদী থেকে মেশিনের সাহায্যে বালু তোলা, নদীর পাড় কাটা কিংবা অন্যের জমি থেকে বালু উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই বলে জানাচ্ছেন প্রশাসন। এবিষয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, দিনাজপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এইচ,এম. মাগ্ফুরুল হাসান আব্বাসী।

যত্রতত্র মেশিন দিয়ে নদী ও ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছেন,স্থানীয়রা।
এই অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন নদী তার গতিপথ হারাচ্ছে,তেমনি ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জলবায়ু মোকাবেলায় এসব অবৈধ পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবী জানিয়েছেন, পরিবেশ বিদরা।

(এস/এসপি/মে ২৯, ২০২০)