স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দিনাজপুরে তাল গাছ লাগানো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সড়কের দু’ধারে ছাড়াও বসত ভিটা’র আশপাশে তাল গাছের বীজ রোপণ করছে অনেকেই। ১২ বছর আগে থেকে একটি সংগঠন প্রায় ৫কিলো মিটার দীর্ঘ সড়কের দু’ধারে লাগাচ্ছে তাল গাছ ।ইতোমধ্যে তাল গাছগুলো দৃষ্টি নন্দিত হয়ে উঠেছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগেও চলছে তাল বীজ বোপনের কাজ।

গত বছর একদিনে দিনাজপুরে বজ্রপাতে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। চার বছরে দিনাজপুরে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের । এছাড়াও মারা গেছে বেশ কিছু গবাদিপশু। আহত হয়েছে কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ মারাত্মক হুমকি’র সম্মুখিত হয়ে পড়েছে। তাই এসব মোবাবেলায় দিনাজপুরে তাল গাছ লাগানো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।সড়কের দু’ধারে ছাড়াও বসত ভিটা’র আশপাশে তাল গাছের বীজ রোপণ করছে অনেকেই।

দিনাজপুর বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান খান জানিয়েছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দিনাজপুরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১০ বছর বছরে ৭ লাখ তাল গাছের বীজ বোপন করেছে। রাস্তা, মাঠ, পতিত জমি, বাড়ির আশপাশের ফাকা স্থানে লাগানো হয়েছে এসব গাছ।

অন্যদিকে, আরেকটি সংগঠন প্রায় ৫কিলো মিটার দীর্ঘ সড়কের দু’ধারে লাগাচ্ছে তাল গাছ।ইতোমধ্যে তাল গাছগুলো দৃষ্টি নন্দিত হয়ে উঠেছে। নশিপুর সিআইজি কৃষক সমবায় সমিতি’র নামে এই সংগঠনটি ২০৭ সালে থেকে প্রায় ৫০ হাজার তাল গাছ লাগিয়েছে বলে জানালেন, উদ্যোক্তা কৃষিবিদ আরিফুর রহমান আরিফ।

বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিনাজপুরে প্রাণহানী সংখ্যা দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি। বজ্রপাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সরকার সারা দেশে বেশি করে তালগাছ রোপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে দিনাজপুরে সরকারিভাবে আরো ৩ লাখেরও বেশি তাল বীজ বোপন করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বোপন করেছে এ তাজ বীজ।
তালগাছ বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উঁচু গাছেই বেশি বজ্রপাত হয়। উঁচু গাছ থাকলে এলাকায় বজ্রপাতে প্রাণহানি লাঘব হয়। বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকানোর জন্য উঁচু তালগাছই সবচেয়ে কার্যকর বলে জানিয়েছেন

পরিবেশবিদ এবং দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড.মো.সরিফুল বারী।

তিনি বলেন, শুধু বজ্রপাত প্রতিহত করে প্রাণ রক্ষা নয়,তালগাছ দীর্ঘদিন জীবিত থেকে মানুষের উপকার করে। তালগাছ থেকে ঘর নির্মাণের মূল্যবান কাঠ ও জ্বালানি পাওয়া যায়। এ গাছ রস ছাড়াও কাঁচা ও পাকা সুস্বাদু ফল দিয়ে থাকে।তাল গাছের নানা উপকারিতা রয়েছে। যেমন তাল পাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, চাটাই, মাদুর এবং কান্ড দিয়ে বাড়ি ও নৌকা তৈরির কাজ হয়। তালের ফল এবং তালশাঁস পুষ্টিকর খাদ্য। তাল গাছের কান্ড থেকে রস সংগ্রহ হয় এবং তা থেকে গুড়, পাটালি, মিছরি তৈরি হয়। এই গাছ দীর্ঘজীবী। কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে এবং ফল দেয়।
শুধু বজ্রপাত প্রতিহত নয়, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই তালগাছের প্রয়োজন রয়েছে। তাই, এই লাগ গাছ লাগানোর তাগিদ দিচ্ছেন, পরিবেশবিদরা।

(এস/এসপি/মে ৩০, ২০২০)