স্টাফ রিপোর্টার : বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশজুড়ে চলছে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি। সরকারি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ও শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে চলছে বিচার কার্যক্রম। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্যে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তাকর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় সেখানে লকডাউন অব্যাহত রয়েছে।

রবিবার (৩১ মে) ট্রাইব্যুনালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। এর আগে গত ১২ মে পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের গেট খোলা ছিল। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। তাদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ২২ জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর গত (১২ মে) লকডাউন ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

রবিবার সকাল ১০টার দিকে ট্রাইব্যুনালের গেটে ধোয়ামোছার কাজ করতে দেখা গেছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন চলাকালে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দফায় দফায় বৈঠক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের সভাপতিত্বে একবার ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য বিচারপতি অসুস্থ হওয়ায় চিকিৎসা নেয়ার জন্য এয়ারঅ্যাম্বুলেন্সে ভারতে গেছেন। এখন সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালে নাকি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল খোলা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সূত্রে জানা গেছে।

টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটি শেষে রোববার (৩১ মে) থেকে খুলছে সরকারি-আধা সরকারি অফিস ও আদালত। চালু হচ্ছে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে ট্রেনও। আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সরকারি অফিস ও গণপরিবহন চালানোর জন্য নির্দেশনাও জারি করেছে সরকার।

সরকারের আদেশের প্রেক্ষিতে করোনা সংক্রমণ রোধে ও শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চ্যুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১১টি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় ট্রাইব্যুনাল কোন প্রক্রিয়ায় চালু হচ্ছে।

এর আগে গত ১২ মে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ২২ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল লকডাউন করা হয়েছিল। সে দিন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের অন্যতম সদস্য প্রসিকিউটর (প্রশাসন) জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘এক এক করে ট্রাইব্যুনালের দুটি ব্যারাকে থাকা এপিবিএনের প্রায় ২২ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এখনও প্রায় ১৭ জন সদস্য ট্রাইব্যুনালের ভেতরে অবস্থান করছেন। এ কারণে পুরো ট্রাইব্যুনাল লকডাউন ঘোষণা করা হয়।’

এদিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জোয়াদ আল মালুম জানান, ট্রাইব্যুনালের যাবতীয় রেকর্ডপত্রসহ পুরো ভবনের নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। তারা এরই মধ্যে বাইরে থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকা কর্ডন করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার, প্রসিকিউশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল ব্যারাকের এক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২৭ এপ্রিল নতুন করে আরও দুই এপিবিএন সদস্য করোনা শনাক্ত হয়। এরপর সেখানে দায়িত্বে থাকা সবমিলিয়ে ২২ সদস্য করোনা শনাক্ত হলে ট্রাইব্যুনাল এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আজ লকডাউন খুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তথা ধোয়ামোছার কাজ চলছে।

(ওএস/এসপি/মে ৩১, ২০২০)