চৌধুরী আবদুল হান্নান


পাঁচ শত কোটি টাকার একটি ঋণ প্রস্তাব প্রক্রিয়ার সূচনা লগ্নে, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডির ওপর ঋণ আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে হামলা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

চাপ প্রয়োগ ও গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় গুলশান থানায় গত ১৯ মে মামলা হয়েছে।অভিযুক্তরা হলেন সিকদার গ্রুপের এমডি রন হক সিকদার ও তার ভাই দীপু হক সিকদার।

ঋণ পাওয়া নিয়ে শিল্পপতি ঋণ গ্রহীতার ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী যেভাবে তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। কারণ করোনাকালের অস্হিরতা !

ঋণ প্রদানের পূর্বে প্রস্তাবিত জামানত যথাযথ আছে কিনা তা যাচাই করার দায়িত্ব ব্যাংকের।ব্যাংকারদের ওপর এমন হামলা আবারও মনে করিয়ে দিলো, ক্ষমতার দাপট আর রাঘব বেয়ালদের কাছে ব্যাংকের অসায়াত্তের কথা। ব্যাংকের এই শীর্ষ নির্বাহী অনায়াসেই নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে একটা সমঝোতায় পৌছাতে পারতেন, কিন্ত তারা ব্যাংকের বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করতে অনড় ছিলেন,বুঝতে অসুবিধা হয় না।

আমি এই দুই কর্মকর্তা এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ হায়দার আলী এবং অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে ন্যায়-নীতির পক্ষে অনড় থাকার জন্য অভিনন্দন জানাই, আপনাদের মতো সৎ, সাহসী মানুষ ব্যাংকিং খাতে বড় প্রয়োজন।বাছবিচার না করে, অপাত্রে বা অব্যবসায়ীদের মাঝে অবাধে ঋণ বিতরণের ফলে আজ ব্যাংকগুলো খেলিপি ঋণের বোঝা আর বহন করতে পারছে না। এখন তো অবস্হা এমন দাড়িয়েছে যে, এক শ্রেনীর লোক মনে করে ব্যাংক থেকে কলা-কৌশল করে ঋণের নামে অর্থ বের করে নিতে পারলে, আর ফেরত না দিলেও কিছু হবে না।তাই তো আজ ব্যাংকিং খাত এক ডুবন্ত তরীতে পরিনত হতে চলেছে।

এই চলমান করোনাকালে যেখানে সরকারের নির্দেশে সকল কাজ সীমিত করে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করার কথা,সেখানে নতুন করে বড় বড় ঋণ প্রস্তাব বিবেচনা করা কী এতই জরুরি হয়ে পড়লো ?ভাবতে বিস্ময় লাগে আর অনেক আশংকার ইঙ্গিত বহণ করে ।

কোনো প্রতিষ্ঠানের সংকটকাল মোকাবেলা করার জন্য কিছু সৎ,সাহসী,দক্ষ,স্বাধীনচেতা জনবলের প্রয়োজন হয়।
যোগ্য, সৎ কর্মকর্তাগণ বর্তমানে কোনঠাসা হয়ে আছে।ইতিমধ্যে যারা “ বড় কর্তার “ অনৈতিক নির্দেশ অবলীলায় মেনে না নেয়ার জন্য রোষাণলে পড়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের খুঁজে বের করে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।তাদের সুরক্ষা দিলে ব্যাংক ব্যবস্হাপনা শক্তিশালী হবে।

ব্যাংক খাতের অব্যবস্হা, দুর্নীতি রোধে এ যাবৎ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি, যা হয়েছে তা কথার ফুলঝুরি মাত্র।ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, স্পেশাল ব্যাংক ট্রাইবুনাল গঠন,ব্যাংক কমিশন গঠন ইত্যাদি উচ্চ বিলাসী কথা বার্তা শুনা যায়।

ব্যাংক খাত রক্ষায় সব কিছু করুণ,বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার আগে ব্যাংকে কর্মরত সৎ,সাহসী,দক্ষ করিকর্তাদের সুরক্ষা দিন, তাতে অন্তত ব্যাংকের অভ্যন্তরে অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ শক্তি নিশ্চিত তৈয়ার হতে থাকবে।


লেখক : সাবেক ব্যাংকার ।