রণেশ মৈত্র


তিন মাস আগে শুরুর দিকে করোনা নিয়ে যেমনটি ধারণা করা গিয়েছিল আজ মে মাসের শেষ প্রান্তে এসে তেমনটি ভাবনার সামান্যতম অবকাশ নেই। আজ তিন সপ্তাহ হলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। রোগীর সংখ্যা এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যে, যেসব হাসপাতাল করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তাতে আর কুলাচ্ছে না কোথাও ঠাঁই নেই। তাই ঢাকা, চট্টগ্রামে নতুন করে বিভিন্ন হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করতে হচ্ছে (কিন্তু প্রকৃতই সেগুলিতে করোনা রোগী ভার্তি করা হচ্ছে কিনা জানা যাচ্ছে না) পরিণতিতে অপরাপর রোগের আক্রান্ত হাজার হাজার রোগীর চিকিৎসা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে যেমন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করছেন তেমনি আবার অপরাপর রোগে আক্রান্ত রোগীরা অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুপথযাত্রী হতে বাধ্য করছেন।

মনে রাখা দরকার, এটি ১৬-১৭ কোটি লোকের দেশ। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্যে হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে কয়টি তাতে আসন সংখ্যাই বা কয়টি? রোগীর অনুপাতে ডাক্তার-নার্স ও অপরাপর স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই বা কয়টি?

আবারও বলি আমরা ১৬-১৭ কোটি মানুষ বাস করি এই দেশে। করোনা ভাইরাস তিনমাস আগে এদেশের মানুষকে তেমন একটা উদ্বিগ্ন করে নি প্রধান: সরকারের ঢিলেঢালা ভাব, প্রস্তুতিবিহীনভাবে চলা ও দায়সারা টেষ্টিং ব্যবস্থা (বিমান বন্দরসহ) প্রভৃতি দেখে। এর সাথে সাধারণ মানুষের এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব এবং উপযুক্ত গন-সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কেন্দ্র থেকে সুরু করে মাঠ পর্য্যায় পর্য্যন্ত তার বিস্তৃতি ঘটানোর কার্য্যকর উদ্যোগ হীনতা।
একবিংশ শতাব্দীর ২০ টি বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। ব্যাপক উন্নয়নের জোয়ার চলছে বলে দাবীর অন্ত নেই। হয়েছেও। কিন্তু কারা তার বেনিফিসিয়ারী? তাবৎ প্রকল্পই ধনিকদের স্বার্থে-গরীবদের নি:স্বকরণ প্রক্রিয়া ক্রমবর্ধমান হওয়া সত্বেও তাকে উপেক্ষা করে।

একথাগুলির প্রাসঙ্গিকতা এখানে যে ১৭ কোটি দেশের মানুষের দেশে এ যাবত, বিগত তিন মাসে, কতজন মানুষের করোনা টেষ্ট করা হয়েছে? কোন মাপকাঠিতে দাবী করা হয় দৈনন্দিন দ্বিপ্রাহরিক ব্রিফিং এ যে মাত্র কয়েকশত করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন? আজও, ২৭ মে পর্য্যন্ত ৫ লাখ মানুষের নমুনা টেষ্ট করা হয়েছে কি? হয়েছে তিন লাখেরও কিছু কম সরকারি হিসাব অনুযায়ী।

গত ২৭ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং জানান হয়, ঐ দিন পর্য্যন্ত মোট ২,৬৬,৫৫০ জনের করোনা টেষ্ট করা হয়েছে। আমাদের দেশের লোকসংখ্যা, আগেই বলেছি, ১৬ থেকে ১৭ কোটি। তা হলে তিন মাসে যদি ২,৬৬,৫৫০ জনের টেষ্ট করা হয়ে থাকে তবে, প্রশ্ন তো করাই যেতে পারে, মোট জনসংখ্যার টেষ্ট শেষ করতে তাহলে কত বছর লাগবে?

টেষ্ট সংক্রান্ত ভুল ধারণা

আমাদের দেশের প্রায় সবার মধ্যেই সম্ভবত একটি ভুল ধারণা আছে যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে তখনই কেবল টেষ্ট করাতে বা করতে হয় নতুবা তার প্রয়োজন নেই। ধারণাটি ভুল। টেষ্ট করার উদ্দেশ্য হলো দেহে জীবাণুটি প্রবেশ করেছে কি না তা নির্ধারণ করা। যাচাই এর ফলাফলের ভিত্তিতে ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা।

যদি নেগেটিভ পাওয়া যায় তবে যাতে জীবাণু ঢুকতে না পারে তার জন্যে ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা এবং সকল স্বাস্থ্য বিধি কড়াকড়িভাবে মেনে চলা। কিন্তু যদি পজিটিভ পাওয়া যায় তবে যথাযথ চিকিৎসাদি শুরু করা। এ ক্ষেত্রে যদি রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন দেখা না দেয় তবে সাধারণভাবে বাড়ীতেই পৃথক ঘরে থেকে এবং অন্যদের ছোঁয়াচ বর্জন করে চিকিৎসা চালাতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই কিন্তু আরোগ্য লাভের সম্ভাবনাই বেশী। তবে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ক্ষমতা রোগীর অবশ্যই থাকতে হবে।

তবুও রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধের উপরই সর্বাধিক জোর দিতে হবে এবং তা করা প্রায় শত ভাগ সম্ভব যদি কঠোরভাবে শুরু থেকে স্বাস্থ্য বিধিগুলি মেনে চলা যায়।

বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্যবিধি

এতদিনের অভিজ্ঞতাটা অত্যন্ত করুন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অনেকগুলি নির্দেশনা প্রকাশ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নানা সময়ে প্রদত্ত তাঁর ভাবণে বিধিমালা মানার জন্যে অনুরোধ জানান। কিন্তু ঐ পর্য্যন্তই। সরকারিভাবে দেশের তৃণমূল পর্য্যন্ত সকল পর্য্যায়ে কোটি কোটি মানুষ মাস্ক পরিধান ছাড়া স্বাস্থ্য বিধির অপরাপর নির্দেশনা সম্পর্কে আজও অবহিত নন।

যেমন, ঘন ঘন সাবান জলে হাত ধোয়া, দফায় দফায় সমস্ত মেঝে ও উঠান জীবানুমুক্ত করা, হ্যা- গ্লাভস ও পি.পিই পরে জরুরী দরকারে অল্প সময়ের জন্য বাইরে যাওয়া এবং বাইরে মানুষে মানুষে কমপক্ষে এক গজ দূরত্ব বজায় রাখা, ফিরে এসে মাস্ক পুড়িয়ে ফেলা এবং বাদ বাকী পরনের সকল কিছু কমপক্ষে আধাঘন্টা সাবান ও গরম জলে ধোয়া, পাদুকা বাইরে রেখে স্নান করে কাপড়-চোপড় পরা .. .. ইত্যাদি।

অবহিতকরণ ও অত:পর

বিষয়গুলি শতভাগ মানুষকে সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিকে একত্র করে সকলকে অবহিত করা জরুরী প্রয়োজন ছিল। যে প্রয়োজন এখনও ফুরোয় নি। তাই অবহিতকরণ প্রক্রিয়া কার্য্যকরভাবে সর্বত্র সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরী।

অত:পর ভাবা দরকার ছিল আমাদের দেশের কোটি কোটি মানুষকে সকল কিছু যদি যথার্থভাবে অবহিত করাও হয়-তার ফলেই কি সকলে ঐ বিধিগুলি পূরোপূরি মানতে পারবেন? ডজন ডজন মাস্ক ও হ্যা- গ্লাভস, একাধিক সেট পিপিই, বাড়ীতে যথেষ্ট পরিমাণে সাবান ও জীবানু মুক্ত করার ওষধাদি, পুষ্টিকর খাদ্যাদি গ্রহণ যাতে প্রতিরোধ শক্তি সকলের বৃদ্ধি পায় এসব দ্রব্য ও উপকরণ কিনবার সামর্থ্য কি তাঁদের আছে?

আমার ব্যক্তিগত ধারণা, অন্তত: শতকরা ৭০ ভাগ মানুষেরই অনির্দিষ্টকাল এই ধরণের ব্যয় নির্বাহ করার সক্ষমতা নেই। রোগের সংক্রমণের মেয়াদ যেহেতু অনির্দিষ্ট তাই এ দায়িত্ব যদি সরকার গ্রহণ না করে-তবে পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার আশংকা প্রায় শতভাগ।

মূল সমস্যা পুঁজিবাদ

বাংলাদেশে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিদ্যমান। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যেও কোন কোন দেশে কিছুটা গণমুখী ও সমাজকল্যাণ মূলক ব্যবস্থা তাদের নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সম্পূর্ণ আংশিক ফ্রি করে দিয়েছে। যেমন অষ্ট্রেলিয়া। সেখানে অষ্ট্রেলিয় নাগরিকদের জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কার্যক্রম সম্পূর্ণ ফ্রি। কিন্তু অনুরূপ সুবিধা অনেক উন্নত পুঁজিবাদী দেশে নেই। যেমন আমেরিকা-যে দেশটি সর্বোচ্চ উন্নত রাষ্ট্র বলে বিবেচিত।

কিন্তু সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে, যেমন কিউবা, ভিয়েতনাম, নেপাল প্রভৃতি দেশে স্বাস্থ্য জনগণের মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত শিক্ষাও তাই। যেমন ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সকল সমাজতান্ত্রিক দেশে। ফলে, ঐ দেশগুলিতে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত এবং সম্পূর্ণ বিজ্ঞান ভিত্তিক। জনসংখ্যা অনুপাতে হাসপাতাল, বেড, ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী সবই যথেষ্ট। সিট নেই, ডাক্তার নেই, নার্স নেই এমন কথা ঐসব দেশে কদাপি শুনা যায় না। গবেষণাও বিস্তর। সকল প্রতিকূলতাকে জয় করেই তারা এগুলি সুষ্ঠুভাবে কার্য্যকর করে চলেছে।

বর্তমানের ঐ সমাজতান্ত্রিক এই কারণেই সরকারগুলি ডিসেম্বর, ২০১৯ এ যেই মাত্র করোনা সংক্রমণের খবর জানতে পারলো তৎক্ষণাৎ সে সব দেশ বিমান থেকে সুরু করে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়-যাতে সংক্রমিত দেশ থেকে জীবাণুবাহী কেউ ঐ দেশগুলিতে ঢুকতে না পারে। অপরদিকে সারা দেশকে তারা তৎক্ষণাৎ লক ডাউন করে সকল নাগরিকের টেষ্টিং এর ব্যবস্থা করে লক্ষণ ধরা পড়া মাত্র তাদেরকে হাসপাতালে আইসোলেশনে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। স্বাস্থ্য বিধিগুলিও সকলের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে চালু করে। ফলে, অল্প দু’চারজন সংক্রমিত হলেও করোনায় মৃত্যুর খবর সে সব দেশে নেই।

পুঁজিবাদী দেশগুলিতে ধনী লোকের অভাব নেই। অঢেল সম্পদ তারা গড়ে তুলেছে মেহনতি মানুষের শ্রমকে শোষণ করে। ধনীদের মধ্যে স্বল্প কিছু সংখ্যক বাদে সবাই চিকিৎসা গ্রহণ করেন বিদেশে গিয়ে। ফলে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, ফ্রি ও মান সম্পন্ন করার তাগিদ তাঁদের নেই। ফলে মেডিক্যাল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী তৈরীর ব্যবস্থাও নেহায়েতই অপ্রতুল। এই সুযোগগুলি বৃদ্ধির দাবী তুললে তারা তহবিল শূন্যতার কথা বলেন। মানুষের কাছেও ঐ জবাব সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

কিন্তু বস্তুত:ই কি অর্থভাব? বাৎসরিক বাজেট দেখলে দেখা যায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের ভয়াবহ স্বল্পতা। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং শিক্ষার উন্নত ব্যবস্থা ঐ স্বল্প তহবিলে কীভাবে হবে? প্রয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সর্বাধিক অর্থ বরাদ্দের এবং সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্তভাবে তার পরিকল্পিত ব্যবহারের। হ্যাঁ, ‘অর্থাভাব’ কিন্তু আছেও, থাকবেও যতদিন পুঁজিবাদ থাকবে। রাষ্ট্রীয় তহবিলে থাকবে সেই অর্থাভাব। কারণ আয় উপার্জনের মূল উৎসগুলির মালিক ব্যক্তিগতভাবে কতিপয় ধনিক যাদের জীবনটাই শ্রমজীবী মানুষের নির্মম শোষণের উপর দাঁড়িয়ে। ঐ শ্রমজীবী মানুষেরাই তো শতকরা ৯০ ভাগ। বাদ বাকী ৮ ভাগ ঐ গোষ্ঠীর উচ্ছিষ্ট খেয়ে বাঁচে।

“অর্থাভাবে” দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো বিদেশী ঋণ এনে তথাকথিত ‘উন্নয়ন’ সাজানো। ঐ উন্নয়নে চোখ ধাঁধায় বটে কিন্তু তার চড়াদামে সুদ আর ঋণদানকারী দেশের “বিশেষজ্ঞ” দেরকে বাধ্যতামূলকভাবে পুষতে গিয়ে তাবৎ তহবিল হয়ে যায় ফাঁকা। বাদ বাকী তো ব্যাংক থেকে ঋণের নামে টাকা নিয়ে বিদেশে নির্বিঘ্নে পাচার করা।
“উন্নয়ন” বলতে বুঝানো হয়, রাস্তাঘাট, সেতু ও নয়নাভিরাম দালানকোঠা নির্মাণ বহুতল-বিশিষ্ট অসংখ্য চোখ ধাঁধাঁনো ফ্ল্যাট ও বিপণি। এগুলি ধনিকদের আয়ের বিকল্প উৎস ব্যাংক ঋণের অপরিশোধিত টাকায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে নির্মিত।

এরা উৎপাদনমুখী কাজে অর্থ বিনিয়োগ করে না। পুঁজি খাটায় অনুৎপাদন খাতগুলিতে। তারা দেশকে নির্ভরশীল করে রাখতে চায় বিদেশী পুঁজিবাদী দেশগুলির উপর। ফলে, তারা সাচ্ছন্দেই আমাদের দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়ায় রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বও মারাত্মকভাবে হরণ করে।

তাই ব্যবস্থাটি এক কথায়, আধা ঔপনিবেশিক। ইংরেজ ও পাকিস্তান বিতাড়িত হলেও, আজ বাঙালি ধনিকেরা দেশটাকে গ্রাস করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে শোষিত-বঞ্চিত মানুষেরা (ধনিকেরা নয়) জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বিশ লক্ষ প্রাণ দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল-তারাই আজ স্বাধীন বাংলাদেশে শোষণের শিকার চরমভাবে।
এবারে শুনুন বিশ্ব-পুঁজিবাদের মোড়ল, সা¤্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র আমেরিকায় হাসপাতাল-ডাক্তার থাকলেও চিকিৎসা ব্যয় রোগী বা তার পরিবারে বহন করতে হয়। অত্যধিক সে ব্যয়। তাই ম্যধ মধ্যবিত্ত থেকে বেকার পর্য্যন্ত বিপুল সংখ্যক আমেরিকান চিকিৎসা নিতে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। চিকিৎসা, এমন কি শিক্ষাও ঐ দেশে আজও ফ্রি নয়-বা মৌলিক অধিকারভূক্তও নয়।

প্রকৃত সমাধান

কিন্তু সমাজতান্ত্রিক প্রতিটি দেশে যেহেতু তারা প্রকৃত অর্থে জনগণের রাষ্ট্র তাই সেখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রাধান্য পেয়ে থাকে সকল নাগরিকের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি, মানসম্পন্ন ও উন্নত।

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ক্রমবৃদ্ধি ও ডাক্তার-নার্স স্বল্পতার ছবি ঊলঙ্গভাবে প্রকাশ পাওয়ার বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে করোনা হাসপাতাল বলে ঘোষণা করা হচ্ছে কয়েক হাজার ডাক্তার নার্স নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে (নিয়োগ প্রাপ্তদের সংখ্যা প্রয়োজনের সিকি ভাগও না) বটে কিন্তু বাস্তবে ঐ সকল হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা আদৌ শুরু হয়েছে কি না না কি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বরাবরের মত করোনা আক্রান্ত শুনেই রোগী ভর্তিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে সে তথ্য প্রকাশিত হলে সম্ভবত: থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

কিন্ত আমাদের বাঁচতে হবে। বাঁচার লক্ষ্যে নিরন্তর সংগ্রাম লড়াই চালিয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উচ্ছেদ সাধন করে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্যেই জনগণের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আহার-বাসস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব। আভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ অপরাপর দেশে নব্বুই এর দশকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপর্য্যয় ঘটলেও অভিজ্ঞতার আলোকে ঐ দেশগুলির মানুষেরা নতুন করে সমাজতন্ত্রমুখী ভাবনা ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু কিউবা-ভিয়েতনাম আজও দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে ও বিশ্ববাসীকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে সার্বিক মুক্তি।

বাংলাদেশে ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ও বাহাত্তরের সংবিধানের প্রতিশ্রুতি। সেই পথ থেকে বিচ্যুতির ফলেই সংকট। আজ তাই সমাজতন্ত্রের পথকে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরতে হলে এর বিকল্প নেই।

লেখক : সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।