প্রবাস ডেস্ক : কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে যখন বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে ঠিক সেই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের পার্শ্ববর্তী গীর্জায় যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করলেন ওয়াশিংটনের ক্যাথোলিক আর্চবিশপ উইলটন ডি গ্রেগরি ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে। 

হোয়াইট হাইজ থেকে পায়ে হেঁটে গীর্জায় যাওয়া ট্রাম্প আগত মিডিয়াকর্মীদের সামনে পবিত্র বাইবেল উঁচিয়ে প্রদর্শন করেন। ‘দ্য সেন্ট জন পল-২ ন্যাশনাল শ্রাইন’ এর আর্চবিশপ গ্রেগরি বলেছেন, গীর্জায় ট্রাম্পের এই সফরে তিনি ‘অপব্যবহার’ ও ‘উদ্দেশ্য হাসিলে’র বিষয় দেখছেন। এছাড়া প্রেসিডেন্টের ভূমিকাকে তিনি দেখছেন বিভ্রান্তিকর ও নিন্দনীয় হিসেবে।

মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশের হেফাজতে থাকার সময় মৃত্যু হয় ৪৬ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ শহরে ও বিশ্বের আরো বহু শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারীরা টানা অষ্টম রাত পার করেন।

এই ইস্যুতে শুরু থেকেই বেসামাল কথাবার্তা বলেন ট্রাম্প। বিক্ষোভ দমনে সোমবার তিনি সেনাবাহিনী পাঠানোর হুমকি দেন এবং রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অঙ্গীকার করেন। ট্রাম্প বলেন, শহর ও রাজ্যগুলো যদি প্রতিবাদ দমন করতে না পারে তবে তিনি সেনাবাহিনী মাঠে নামাবেন। যদিও মঙ্গলবার এক মেয়র এই কাজে ন্যাশনাল গার্ড ও মিলিটারি ফোর্স কাজে লাগানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন।

ট্রাম্পকে একহাত নিয়েছেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জো বাইডেন। বারাক ওবামা সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ট্রাম্প এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে তার সমর্থকদের মন জয় করতে চাইছেন। আমেরিকানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেখুন আজ আমরা কোথায় আছি। ভাবুন, এই কি আমরা? আমরা কি এমন হতে চেয়েছি? এ বার্তাই কি আমরা সন্তান ও নাতি-নাতনিদের দিয়ে যাবো -সুখের জায়গায় ভীতি, ক্ষোভ? অযোগ্যতা, স্বার্থপরতা, সামাজিক অস্থিরতা? কিংবা আমরা সেই আমেরিকা হতে চাই সেটি আমরা মনেপ্রাণেই হতে চেয়েছি?’

প্রেসিডেন্টের বাইবেল নিয়ে রাজনীতির বিষয়ে বাইডেন বলেন, ‘গতকাল সেন্ট জন’স গীর্জায় প্রেসিডেন্ট বাইবেল উঁচিয়ে ধরেছেন। কিন্তু আমি আশা করব, যতবার প্রচারের জন্য এমনটি করেন ততবার যেন তিনি এটি খোলেন। তিনি যদি এটি খোলেন, হয়তো কিছু শিখতেও পারবেন।’

আর্চবিশপ গ্রেগরি আরো বলেন, প্রেসিডেন্টের এই সফর গীর্জার ধর্মীয় নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তিনি যোগ করেন, সব মানুষের অধিকার রক্ষায় সমর্থন করা উচিত ক্যাথোলিকের। এছাড়া ট্রাম্প গীর্জা যাওয়ার আগে হোয়াইট হাউজের সামনে বিক্ষোভরত মানুষকে সরিয়ে নিতে পুলিশের বলপ্রয়োগেরও সমালোচনা করেন আর্চবিশপ। তিনি মন্তব্য করেন, ‘ধর্মীয় স্থানে শুধু ছবি তোলার উদ্দেশে মানুষকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা কিংবা ভীতি প্রদর্শন করাটা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাথোলিক বিশপদের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম আফ্রো-আমেরিকান এই গ্রেগরি। যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক ও ক্যান্টারবুরির আর্চবিশপ বলেছেন, বর্তমান এই নৈরাজ্য শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যেরই মন্দ দিকটি তুলে ধরেছে।

এদিকে ফ্লয়েডকে হত্যার জন্য অভিযুক্ত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। যদিও প্রতিবাদকারী ও সমালোচকরা বলছেন, শুধুই অভিযোগপত্র এখানে যথেষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছেই। মঙ্গলবার এক নিউইয়র্ক শহরেই ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কারফিউ ভঙ্গ করে বিক্ষোভ করায় টিয়ালশেল মারা হয়েছে আটলান্টায়। বিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস শহরও।
মঙ্গলবার লাস ভেগাসের শেরিফ জানান, বিক্ষোভ দমনকালে গোলাগুলিতে একজন অফিসার মারা গেছেন। আর মিসৌরির সেন্ট লুইসে আহত হন চারজন অফিসার।

(বিপি/এসপি/জুন ০৩, ২০২০)