শরীয়তপুর প্রতিনিধি : স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে শরীয়তপুরে সরাসরি উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে বোরো ধান ক্রয় শুরু করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার জেলার প্রধান খাদ্য ডিপো আংগারিয়া খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের। ধান সংগ্রহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সাথে উপস্থিত ছিলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহাবুর রহমান শেখ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এস,এম. তাহসিনুল হক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আমির হামজা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতিমা খাতুন, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. নুরুল হক, আংগারিয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সরকার প্রমুখ।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শরীয়তপুর জেলার ৬টি উপজেলা থেকে ২ হাজার ৪৯১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হবে। এর আওতায় সদর উপজেলার আংগারিয়া খাদ্য গুদাম থেকে ৬২৪, ডামুড্যা থেকে ৪০৮, গোসাইরহাট থেকে ৩৫১, নড়িয়া থেকে ৫৫৯, ভেদরগঞ্জ থেকে ৪৬৫ ও জাজিরা থেকে ৮৪ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহেরর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। কয়েকটি শর্তে কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পারবে বলে জানান খাদ্য বিভাগ। যেমন, ধানের সঠিক আদ্রতা, বিজাতীয় পদার্থ-ভিন্ন জাতের ধানের মিশ্রণ, অপুষ্টি-বিনষ্ট ধান ও চিটা মুক্ত উজ্জ্বল সোনালী ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করতে পারবে। তবে কৃষকদের কৃষি কার্ড থাকা ও ব্যাংকে কৃষি একাউন্ট বাধ্যতামূলক এবং কৃষি বিভাগ কর্তৃক অবশ্যই তালিকাভূক্ত কৃষক হতে হবে।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে খাদ্য বিভাগকে মোট ৯ শত ৩৫ জন উৎপাদক কৃষকের তালিকা প্রদান করেছেন। তার মধ্য থেকে ধান সরবরাহের জন্য উপজেলা খাদ্য শস্য সংগ্রহ কমিটি ৩১৫ জন কৃষকের নাম লটারীর মাধ্যমে মনোনীত করেছেন। লটারী বিজয়ী প্রতিজন কৃষক দুই মেট্রিক টন করে ধান বিক্রয় করতে পারবেন।

প্রথম দিন ধান সংগ্রহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আংগারিয়া ইউনিয়নের কালু শিকদার, রুহুল আমিন খান ও চিকন্দী ইউনিয়নের আনছার আলী মুন্সী ৫ মন (২০০ কেজি) করে ধান বিক্রয় করেন। তাদের ধান পরীক্ষা নীরিক্ষা করে খাদ্য গুদামে সংগ্রহ করা হবে। উৎপাদক কৃষকরা জানান, তারা প্রত্যেকে ৩০০ থেকে ৫০০ মন ধান উৎপাদন করেছেন। তারা প্রত্যেকে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন করে ধান দিতে পারবেন। অথচ খাদ্য বিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী তারা ২ মেট্রিক টনের বেশী ধান দিতে পারছে না। কৃষকদের দাবী সরকার যেন কৃষকদের কাছ থেকে আরও বেশী করে ধান সংগ্রহ করে। তাহলে কৃষক বাঁচবে।

ধান সংগ্রহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে কৃষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। প্রত্যেক কৃষককে আমাদের স্যালুট করা উচিত। তিনি জেলা খাদ্য বিভাগের উদ্দেশ্যে বলেন, ধান সংগ্রহে অনিয়মের বিষয়ে কোন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। খাদ্য মন্ত্রনালয় দূর্নীতিমুক্ত খাদ্য বিভাগ চায়। আমিও চাই খাদ্য বিভাগ দূর্নীতিমুক্ত হোক।

জেলা প্রশাসক কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কৃষক কৃষি কাজ করে খাদ্য উৎপাদন করেন বলেই আমরা তা ভোগ করি। করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব যখন দূর্ভীক্ষ নিয়ে চিন্তা করছে ঠিক সেই মূহুর্তে বাংলাদেশের কৃষকরা ধান উৎপাদন করে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশকে সচল রেখেছেন। তাই কৃষক ভাইয়েরা আপনারা আমাদের স্যালুট পাওয়ার যোগ্য।

শরীয়তপু-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু বলেন, এবারের ধান ক্রয় নিয়ে কৃ্ষকের সাথে কোন রকম ছলচাতুরী সহ্য করা হবেনা। কৃষকের ধান যেন কোন মধ্যসত্বভুগী, দালাল, সিন্ডিকেট বা ফড়িয়াচক্র বিক্রয় করতে না পারে সেদিকে তিনি সতর্ক নজর রাখতে বলেছেন খাদ্য বিভাগকে।

সাংসদ অপু আরো বলেন, পৃ্থিবীর অনেক দেশ ও অঞ্চলে করোনা কালিন বৈশ্বিক এই মহা মন্দায় দূর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। এ পরিস্থিতি থেকে আমরাও মুক্ত নই। বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম কান্ডারী এখন খাদ্য শস্য উৎপাদনকারি কৃষক। তাদের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিবিনি খেললে কঠিন মূল্য দিতে হবে।

(কেএনআই/এসপি/জুন ০৪, ২০২০)