রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : পুলিশের নির্দেশ উপেক্ষা করে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা পৌর শাখার সাবেক আহবায়ক মকবুল হোসেনের বাড়িতে আবারো হামলা চালানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে রাধানগরের আব্দুস সালাম ও তার জামাতা সাইফুলের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

মকবুল হোসেন জানান, তার বাবার কাছ থেকে ৭৫ হাজার রাধানগরের কেষ্ট ময়রার ব্রীজের পাশে আড়াই শতক জমি বিক্রির জন্য টাকা নিয়ে ১৯৯১ সালে চুক্তিবদ্ধ হন সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের মীরাজ আলী। সে অনুযায়ি তারা ওই জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করে আসছেন। মীরাজ আলী ১৯৯৮ সালে মারা যাওয়ার আগে ওই জমি লিখে দিয়ে যতে পারেননি। তার ছেলেরা ওই জমি থেকে কখনো তাদের চলে যেতেও বলেননি।

মকবুল হোসেন জানান, বাবার হাতে গড়া ৩০ বছরের আশ্রয়টুকু ভেঙে জবরদখলের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আব্দুস সালাম ও তার নৈশপ্রহরী জামাতা সাইফুল ওরফে জেরো সাইফুল। ২০ রোজায় ঘরের দরজা, প্রাচীর ও ছাদের একাংশ ভাঙচুর করে। পথচারীরা বাধা দিলে একপর্যায়ে তার চলে যায়। বৃহষ্পতিবার সকাল না হতেই সালাম ও তার জামাতা সাইফুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আবারো ভাঙচুর শুরু করে।

স্থানীয়দের বাধার মুখে হামলাকারিরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। একপর্যায়ে সুলতানপুরের জনৈক প্রিন্স পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাসেরের পক্ষে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদ অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলুকে বিষয়টি নিয়ে বসাবসির মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলেন। অপরদিকে বৃহষ্পতিবার রাত ৯টার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়েরকে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। সে অনুযায়ি আগামি রোববার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলামের বাড়িতে বসাবসির সিদ্ধান্ত হয়।

মকবুল হোসেনের অভিযোগ, পুলিশের নির্দেশনা অনুযায়ি বসাবসির সিদ্ধান্ত হলেও শুক্রবার সকালে কেষ্ট ময়রার ব্রীজের পূর্ব পাশে অবস্থান নিয়ে তার বাড়ি ভাঙচুরের নির্দেশনা দেন সুলতানপুরের প্রিন্স। সে অনুযায়ি সালাম ও সাইফুলের নেতৃত্বে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা তার বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। বাধা দেওয়ায় তাদেরকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়া হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানালে উপপরিদর্শক হাসান ভাঙচুর করে চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে এসে উল্টে তাদেরকেই ধমক দেন। তাকে বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। পরে প্রিন্স এসে তার মোবাইল ফোন থেকে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা আবু নাসেরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়ে শনিবার বসাবসি করতে বলেন।

এ ব্যাপারে আব্দুস সালাম বলেন, তাদের জমিতে জোরপূর্বক দখল করে থাকা মকবুল হোসেনকে যে কোন মূল্যে উচ্ছেদ করা হবে।

বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা সদর শাখার সভাপতি স্বপন কুমার শীল বলেন, দলীয় জেলা সভাপতি সাংসদ অ্যাড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ শুক্রবার সকালে তার অসুস্থ বোনকে নিয়ে ঢাকায় গেছেন। রাতে তার সঙ্গে মোবাইলে পরামর্শ করে মকবুলের ব্যাপাওে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কায়ের সরদার বলেন, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথামত উভয়পক্ষকে নিয়ে মীমাংসার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের বাড়িতে বসাবসির সিদ্ধান্ত হয়। এরপরও শুক্রবার সকালে ওই বাড়ি ভাঙচুর করা বসাবসির পরিবশেকে নষ্ট করে দিয়েছে। তবে শনিবার আবারো বসার ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজামান বলেন, খবর পেয়ে উপপরিদর্শক হাসানকে পাঠানো হয়। তার সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/জুন ০৫, ২০২০)