রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লা হত্যা মামলায় দু’ সহোদরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সোমবার সাতক্ষীরার ভার্চুয়াল আদালতের বিচারক বিলাস কুমার মণ্ডল মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন শেষে এ আদেশ দেন।

রিমাণ্ড মঞ্জুর হওয়া আসামীরা হলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে ও খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের দু’ সহোদর আব্দুস সালাম বাচ্চু ও জুলফিকার আলী জুলু।

মামলার বিবরণে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরবত মোল্লাকে গত ১১ এপ্রিল কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছেলে সবুজ হোসেন মোল্লা বাদি হয়ে ১২ এপ্রিল কুখ্যাত রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে এলাকার মুর্তিমান আতঙ্ক ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ কমপক্ষে একডজন মামলার আসামী খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ ডালিম, তার দু’ ভাই আব্দুস সালাম বাচ্চু ও জুলফিকার আলীসহ ৫৭ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরপরই আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ও উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামানের অভিযানে আব্দুস সালাম বাচ্চু, জুলফিকার জুলি, জামসেদসহ ১০জনকে গ্রেপ্তার হয়। ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হানসানুজ্জামান আদালতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্দুস সালাম বাচ্চু, জুলফিকার আলী ও জামসেদকে ১০ দিন করে রিমাণ্ডের আবেদন জানান। ৮ মে মামলার তদন্তভার ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলামের উপর ন্যস্ত হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে রিমাণ্ড আবেদন শুনানীতে জটিলতা দেখা দেয়।

একপর্যায়ে ভার্চুয়াল আদালতে হাজির না করিয়ে আসামীদের সাতক্ষীরা জেলা কারাগারের মধ্যে জেলরের ভিডিও কলে হাজির দেখিয়ে মামলার রিমাণ্ড শুনানী করা হয়। বিচারক আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চু, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শহীদুল ইসলাম পিণ্টু, সংশ্লিষ্ট আদালতের উপপরিদর্শক (সিএসআই) মনতাজউদ্দিন ও তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলামের বক্তব্য শুনানী শেষে আব্দুস সালাম বাচ্চু ও জুলফিকার আলী জুলির এক দিন করে রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। একই সাথে জামসেদেও রিমাণ্ড মঞ্জুর হয়নি এবং প্রথম দিনে গ্রেপ্তারকৃত ১০ আসামীর জামিন আবেদন বাতিল করা হয়। আদেশে আগামি ৯ জুনের মধ্যে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার তদন্তকারি কর্মকতা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বলেন, বিচারকের লিখিত আদেশ দেখার পর আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলখানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনা হবে।

প্রসঙ্গত, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’ গ্র“পের সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা শরবত মোল্লার মৃত্যু, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সবুজ মোল্লা, ওবায়দুল্লাহ ডাবলু ও জামিলা খাতুন বাদি হয়ে চারটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় ১৩৮ জন আসামী হলেও হত্যা মামলাং ১২জন ও ভাঙচুরের মামলায় তিনজন আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে ভাঙচুরের মামলায় গ্রেপ্তারকৃতরা সকলেই আদাললতে সোপর্দ করার দিনেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

(আরকে/এসপি/জুন ০৮, ২০২০)