রাজন্য রুহানি, জামালপুর : ৬ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জামালপুরে নির্মাণ হবে নতুন কারাগার। পুরনো কারাগারের প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সুবিধাসহ নারী, পুরুষ ও কিশোর বন্দিদের ওয়ার্ড নির্মাণের লক্ষ্যে ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য জামালপুর জেলা কারাগার নামের একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর সভায় উঠবে আগামি ২১ জুন রবিবার।

প্রকল্পটি অনুমোদন হতে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি।

মির্জা আজম এমপির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জামালপুর গণপূর্ত বিভাগ অফিস সূত্র জানায়, ১৮৯৯ সালে উপ-কারাগার হিসেবে চালু হয় জামালপুর কারাগার। ১৯৮৮ সালে সেটি জেলা কারাগার হিসেবে উন্নীত হয়। ১২১ বছরের পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে চলছে এই জেলা কারাগারটির কার্যক্রম। এসব ভবনে ২৯১ জন পুরুষ ও ১৬ জন মহিলা মিলে ৩০৭ জন থাকার নিয়ম থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছে আরও অধিক বন্দী। অনেক আগেই ভবনগুলো ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষণা করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ভবনগুলো ও স্থাপনাসমূহ মেরামত, সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

১৮ নভেম্বর ২০১৫ সালে মন্ত্রী পরিষদের প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সে বছরে মন্ত্রী পরিষদের দ্বিতীয় সভায় "পরীক্ষা নিরীক্ষাক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যমান জরাজীর্ণ কারাগারের সংস্কার ও নতুন কারাগার নির্মাণ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া যেতে পারে" শীর্ষক প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কারা অধিদপ্তর ‘জামালপুর জেলা কারাগারের অধিকাংশ ভবনই জরাজীর্ণ হওয়ায় কারাগারের বর্তমান অবস্থান ঠিক রেখেই এর সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য "জামালপুর জেলা কারাগার পুনর্নির্মাণ' প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরে ২৮ মার্চ ২০১৭ সালে তৎকালীন কারা মহাপরিদর্শক জামালপুর জেলা কারাগার পরিদর্শন করেছেন।

জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদপ্তরের নকশায় ভূমি উন্নয়ন, বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দী ব্যারাক (পুরুষ) নির্মাণ, পুরুষ শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দী ও কিশোর বন্দী ওয়ার্ড নির্মাণ, পুরুষ বন্দী হাসপাতাল, মানসিকভাবে অসুস্থ বন্দী ওয়ার্ড, মা বন্দীদের জন্য ওয়ার্ড ও শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার, মহিলা বন্দীদের ওয়ার্কশেড ও বিনোদন সেন্টার, মহিলা জেল স্কুল, মহিলা শ্রেণিপ্রাপ্ত ও কিশোরী বন্দী ওয়ার্ড, মহিলা বন্দী সেল, সাক্ষাৎকার ব্লক, প্রশাসনিক ভবন, ব্যাচেলর অফিসার্স কোয়াটার, ৮০০ বর্গফুট আয়তনের একটি এবং ৬৫০ বর্গফুট আয়তনের দুটি আবাসিক কোয়াটার নির্মাণ, ওয়ার্কশেড, স্টোর, লন্ড্রি এবং সেলুন, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার, এমআই ইউনিটসহ ৭৫ জনের পুরুষ ব্যারাক ভবন, সীমানা প্রাচীর, পেরিমিটার দেয়াল, সেগ্রিগেশন দেয়াল, আরসিসি ওয়াকওয়ে, পাম্প হাউজ, ক্যান্টিন, প্যারেড গ্রাউন্ডসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ এবং সোয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি), পুকুর খনন, লিফট, সৌরবিদ্যুৎ, বনায়ন, যানবাহন ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, জেল হাসপাতাল ও নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি, বহির্বিভাগের চারদিকে বিদ্যুতায়ন, বাইরে পানি সরবরাহ, অন্যান্য অফিস সরঞ্জামাদি, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত নতুন এই প্রকল্পে জামালপুর কারাগারের পুরাতন অবকাঠামো বলতে আর কিছুই থাকবে না। সবকিছুই করা হবে নতুন করে।

মির্জা আজম এমপি বলেছেন, ব্রিটিশ আমলে গড়া পুরনো জরাজীর্ণ কারাগারটি ৬ তলা বিশিষ্ট অাধুনিক ভবন নির্মাণ হতে যাচ্ছে। থাকছে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কারাগার আর কারাগার থাকবে না, বন্দীদের সংশোধনের পাঠশালায় পরিণত হবে।

জামালপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মকলেছুর রহমান বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ঝুকিপূর্ণ ভবনে বন্দীরা যেমন জীবনেব ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তেমনি আমরাও ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি পাশ হলে অত্যাধুনিক কারাগারে বন্দীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।

(আরআর/এসপি/জুন ১৯, ২০২০)