শিতাংশু গুহ


আবদুর রকিব বাংলাদেশের মানুষ। তিনি একটি সুন্দর আহ্বান  জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইলিশ হিন্দু মাছ! ইহা হারাম! ইলিশ বয়কট করুন’। স্পষ্টত: তিনি বাঙ্গালী মুসলমানদের ইলিশ মাছ বয়কটের কথা বলছেন। আমি আবদুর রকিবের এই দাবির একজন কট্টর সমর্থক।

মুসলমান যদি সত্যি সত্যি ইলিশ মাছ খাওয়া ছেঁড়ে দেয়, তাহলে চমৎকার হবে? হিন্দু বেশি করে ইলিশ খেতে পারবে! ইলিশ মাছ পুঁটি মাছের চেয়েও সস্তা হয়ে যাবে। আহ্ কি মজা! মুসলমান ভাইয়েরা, প্লীজ আপনারা আবদুর রকিব’র কথা শুনুন। কতকিছুই তো খাননা, ইলিশ না খেলেই বা কি হবে? ভাইসব, ইলিশটা সেক্রিফাইস করুন!

হিন্দুরা গরু খায় না, তাই ভারতীয় উপমহাদেশে গরু বেজায় সস্তা। মুসলমান সস্তায় গরু খাক, হিন্দুরা সস্তায় ইলিশ খাক, সমান-সমান? আবদুর রকিব তাঁর দাবির সমর্থনে যথেষ্ট জোরালো যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর মতে, ইলিশ মূলত: বাংলাদেশী ভূখণ্ডে বেশি। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর জলসীমায় কিছু কিছু উৎপাদন হয় এবং তা পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে?

ভদ্রলোকের বুদ্ধির তারিফ করতেই হবে। গবেষণা করে তিনি জেনেছেন, পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই ইলিশ মাছের উৎপাদন ছিলো। এর আগে ইলিশ নিয়ে এতটা সারবত্তা গবেষণা হয়েছিলো কিনা আমার জানা নেই? তবে আবদুর রকিব আরবের মানুষকে বেশ ভালোবাসেন। তাঁর কথায় বেদুঈনদের প্রতি ‘মহব্বত’ টের পাওয়া যায়।

তিনি লিখেছেন, আরবের লোকেরা ইলিশ খায়না, কারণ সেখানে ইলিশ নাই। পরের শব্দে তিনি আবার লিখেছেন, আরবের ‘পবিত্র’ লোকেরা এই অঞ্চলে আসার আগে এই ভূখণ্ডে সবাই হিন্দু ছিলো। এ থেকে বোঝা যায়, সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর অগাধ জ্ঞান। ‘পবিত্র’ শব্দটি তিনি দু’বার ব্যবহার করে তাঁর মরুপ্রেম ও শ্রদ্ধা প্রমান করেছেন।

আবদুর রকিব আরো বলেছেন, পবিত্র আরবরা এসে হিন্দুদের ধর্মান্তর করে মুসলমান বানিয়েছে। কথা কিন্তু সত্য! সামাজিক মাধ্যমে ছোট্ট একটি পোস্টিং-এ আবদুর রকিব তাঁর জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের জন্যে উজাড় করে দিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশে তার মত মানুষ অধিক সংখ্যায় থাকলে হয়তো আমরা আবারো গাইতে পারতাম, ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’।

ইলিশ কেন হিন্দু আবদুর রকিব এর একটি চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আরবের লোকেরা হিন্দুদের মুসলমান বানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইলিশ মাছ আগের ধর্ম পাল্টিয়েছে কিনা গবেষণায় তা জানা যায়না। অকাট্য যুক্তি। এরপর আর কথা থাকেনা, তৌহিদী জনতা ইলিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লে হয়! নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে হিন্দু ইলিশ থাকতে পারেনা!

আমি আবদুর রকিব’র জ্ঞান-গরিমায় মুগ্ধ। ইলিশ হারাম কেন, সেই যুক্তিও তিনি দিয়েছে। আবদুর রকিব বলেছেন, এই অঞ্চলে হিন্দু বেশি। তাঁরা পূজার পর মুর্ক্তিগুলো নদীতে ফেলে। ইলিশ সেই মুর্ক্তি খায়। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, ইলিশ কেন হিন্দু মাছ? মারহাবা!! তবে নদীতে অন্য মাছও মুর্ক্তি খায়, সব মাছকে ‘হারাম’ ঘোষণা দিলে আরো ভালো হতো না?

দু:খ একটাই? মনে হয়না, বাঙ্গালী মুসলমান আবদুর রকিবের কথায় কান দেবেন! হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির স্বার্থে সৈয়দ মুজতবা আলী একবার মুসলমানদের গরু খাওয়া ছেঁড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, মুসলমানরা শুনেনি। এবারো হয়তো আবদুর রকিবের পরামর্শ বৃথা যাবে? আমি কেন এত উৎসাহী? আমি সংখ্যালঘু আন্দোলন করি, মুসলমান ইলিশ বয়কট করলে সংখ্যালঘুরা সস্তায় প্রোটিন পেতো, এই আর কি?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।