রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : জিরো থেকে হীরো হয়েছেন এক সময়কার শ্যামনগরের চালতেঘাটা অধুনা সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের দিন মজুর মান্দার সরদারের ছেলে রং মিস্ত্রী নুরুজ্জামান ওরফে পাওয়ার বাবু ওরফে টাক বাবু। টাক বাবু ও তার বাহিনীর সদস্যরা অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে স্বত্ববিহীন মানুষকে ওয়ারেশ দেখিয়ে পাওয়ারনামা বানিয়ে দখল করে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার জমি।

সাতক্ষীরা শহরের কামাননগরের বাংলা মোটর এর স্বত্বাধিকারী তমেজউদ্দিন জানান, ১৯৭৫ সালে তার কেনা জমিতে স্বত্ববিহীন শরিকের কাছ থেকে পাওয়ারনামা তৈরি করে জমি দখল করার চেষ্টা করায় নুরুজ্জামান বাবু ওরফে টাক বাবুসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে( দেঃ ৭৩/১৯) নং মামলা করেন তিনি। ওই জমিতে তিনি আদালতের নিষেধাজ্ঞা পান। এরপরও টাক বাবু ও তার সহযোগী রঙ মিস্ত্রী কুকরালীর (টাপরারডাঙী) আব্দুস সালাম স্বর্ত না থাকা ওয়ারেশ এর কাছ থেকে পাওয়ার অব এটর্নি মূলে খুলনার কয়রা উপজেলা সদরের প্রতিমা ভাঙচুরের মামলার আসামী সিরাজুলের স্ত্রী সামছুন্নাহারের নামে গত বছরের ১৪ জুন সাত শতক জমি, সামছুন্নাহারের ভাই আশরাফুলের নামে চার শতক জমি, পলাশপোলের গফুর ড্রাইভারের মেয়ে কাকলির নামে চার কাঠা, ভূমিহীন নাজমার নামে দু’ কাঠা জমি লিখে দিয়েছেন। ওই জমি ক্রেতাদের দখলে দিতে টাক বাবু ও সালাম তাদের বাহিনী সদস্য মধুমোল্লারডাঙির নজরুল ইসলাম টুকু, আব্দুর রহমান বাবু, সাত্তার মোড়ল, আব্দুল করিম, রাজুসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে জোরপূর্বক দখল নিতে ইট দিয়ে প্রাচীর দেওয়ার কাজ শুরু করে।

এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা (সিআর-১৪১/৪৯) মামলা করেন তিনি। এ ছাড়া জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ও পৃষ্টপোষক টাক বাবুর বিরুদ্ধে সদর থানায় জিআর-৫৪৭/১৭ ও জিআর ১২৬/১৯ নং নাশকতার মামলাসহ কমপক্ষে নয়টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার এই অনিয়ম ও দূর্ণীতি জাহেজ করতে নব্য আওয়ামী লীগার সেজে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে থাকে সে। স্থানীয় দু’জন সংবাদপত্র মালিককেও পকেটে রেখেছেন টাক বাবু। টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে না পেরে প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে নারী দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরায় না থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছেন টাক বাবু।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, রসুলপুরের সহি খানের মেয়েদের স্বত্ব না থাকার পরও রেজিষ্ট্রি অফিসের কতিপয় দূর্ণীতিবাজ কর্মকর্তা ও দলিল লেখককে ম্যানেজ করে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে পাওয়ারনামা বানিয়ে((বর্তমানে মেয়াদউত্তীর্ণ পাওয়ারনামা ) একরামুল কবীর খানের পক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রায় আট বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা, কোন কাগজপত্র ছাড়াই হাবিব আহসান পটলের সাড়ে তিন বিঘা জমি ও রসুলপুরের জাহানারা জাহিদের সোয়া আট শতক জমি জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন টাক বাবু ও তার বাহিনীর সদস্যরা।

এ ছাড়া চুক্তিপত্র ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি মামলা সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্তরা ভূমিদস্যু টাক বাবু, সালাম, নজরুল ইসলাম টুকুসহ তাদের বাহিনীর সদস্যদের হাত থেকে বাঁচতে সম্প্রতি খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক ড.খঃ মহিতউদ্দিনের কাছে মার্চ পিটিশন করেছেন। একই আবেদন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি ও প্রধাণ মন্ত্রির কাছে।

তবে এ ব্যাপারে মনিরুজ্জামান ওরফে টাক বাবু তার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে হয়রানি ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবাদ করেছেন।

(আরকে/এসপি/জুন ২৯, ২০২০)