রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটার চাঞ্চল্যকর ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী ও শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার বিকেলে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার পরিচয়ে মুরগী ব্যবসায়ি কামটা গ্রামের রাজুসহ তিনজনকে আটক করেছে। 

আটককৃতরা হলেন, নিহত মনিরুলের স্ত্রী দেবহাটা উপজেলার সাংবাড়িয়া গ্রামের রাবেয়া খাতুন ও একই উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন।

সাংবাড়িয়া গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান, তার ভাই ইজিবাইক চালক মনিরুল ইসলামকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় রোববার সকালে গাজীরহাট থেকে কামটা গ্রামের ওহাব আলী সরদারের ছেলে মুরগি ব্যবসায়ি রাজু আহম্মেদকে (৩৮) আটক করে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা। তাকে জিজ্ঞাবাদের একপর্যায়ে রোববার দুপুরে ভাই মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৩০) ও মনিরুলের শ্বাশুড়িকে আটক করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র তাকে জানিয়েছেন।

আনারুল ইসলাম আরো জানান, তাদের এলাকায় বাস করেন আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান। চাচা আজগার আলী, আওছার আলী, ফজর আলী ও আকবর আলীর সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মুজিবর রহমান তার চাচাদের পক্ষ নেন। একপর্যায়ে প্রশাসনে প্রভাব খাটিয়ে ২০১৩ সালে পাওয়ার হাউজের পাশে রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ে হিসেবে কাজ করার সময় পুলিশকে দিয়ে মনিরুলকে গ্রেপ্তার করান মুজিবর। পরে মনিরুলকে আলমগীর হত্যা মামলায় চালান দেওয়া হয়। দীর্ঘ নয় মাস জেলে থাকার সুবাদে মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়ার সঙ্গে ওই নেতার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার বাবা ইসমাইল গাজী প্রতিবাদ করায় বাড়ির সামনে রাস্তায় ও গাজীরহাটে তাকে কয়েকবার মারপিট করেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।

নিরুপায় হয়ে বাবা ইসমাইল গাজী ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুলের স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ও ভাইদের সঙ্গে জমির বিরোধ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবরের নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন বাবা। সংবাদ সস্মেলন করার পর প্রকাশিত খবরের কাগজ লাপাত্তা করে ফেলায় বাবা সাতক্ষীরায় যেয়ে আবারো কাগজ কিনে এনে এলাকায় ও গাজীরহাটে বিলি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার লোকজন তার বাবাকে গাজীরহাটে আবারো মারপিট করেন।

এর কয়েকদিন পর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং তাকে ছুটি দেওয়ার কথা বলার পর হাসপাতালে যেয়ে তারা বাবার মৃত্যুর খবর পান। এ মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না বলে তিনি মনে করেন। এরপরও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন আনারুল। তিনি মনিরুলের হত্যার যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য খুলনা রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক ড. খন্দকার মহিতউদ্দিনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তবে আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধি মুজিবর রহমান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত ইসমাইল গাজীর বক্তব্যকে মিথ্যা ও কাল্পনিক বলে দাবি করেছেন বারবার। বর্তমানে তিনি মনিরুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন মুজিবর রহমান।

এ ব্যাপারে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(তদন্ত) উজ্জ্বল কুমার মৈত্র আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমানের সঙ্গে ইসমাইল গাজীর বিরোধের বিষয়টি তাদের গোচরে আছে উল্লেখ করে বলেন, রাজু, রাবেয়া ও ফাতেমাকে কোন আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা ধরে নিয়ে গেছে মর্মে তিনিও শুনেছেন দাবি করে বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে বিস্তারিত বলে জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহষ্পতিবার রাত ১০টার দিকে গাজীরহাট থেকে দেবহাটায় যাওয়ার কথা বলে কয়েকজন সাংবাড়িয়া গ্রামের ইজিবাইক চালক মনিরুলকে ভাড়ায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে কামটা গ্রামের মিঠুর রাইস মিলের পাশ থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমিরুল ইসলাম শুক্রবার রাতেই কারো নাম উল্লেখ না করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

(আরকে/এসপি/জুন ২৯, ২০২০)