ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে নিলর্জ্জ মিথ্যাচার চালিয়ে প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন কতিপয় ক্ষমতালোভী ও অপপ্রচারকারী। তারা সুকৌশলে প্রেসক্লাব ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন।

প্রেসক্লাবের যে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখা হয়েছিল তার একটি টাকাও উত্তোলন করা হয়নি অথচ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে, প্রেসক্লাবের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আব্দুল বাতেন।

তিনি বলেন, একটি অপশক্তি করোনাকালীন মহাদুর্যোগের সময়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও কিছু ব্যক্তি বিশেষকে বর্তমান কমিটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়েছেন এবং তাদের পোষ্য পত্রিকা ও অনলাইনে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। শুধু তাই নয়, প্রেসক্লাবের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও নিলর্জ্জ মিথ্যাচার করা হয়েছে। ব্যাংক এশিয়ার ঈশ্বরদী শাখার দুটি একাউন্টে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিল-যা উধাও হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আব্দুল বাতেন আরো জানান, ২০১৩ সালের ২৯ শে অক্টোবর তৎকালীন গঠিত কমিটির কাছে সাবেক কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় ১০ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়ী হিসাবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ টাকাসহ ব্যাংকে মোট ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ টাকা এবং বিজ্ঞাপন বাবদ বকেয়া পাওনা ৫৬ হাজার টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেয়া হয়।

সেসময় দায়িত্ব গ্রহনকারী কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান শাহীন (যিনি বর্তমানে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলার মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী), সাধারণ সম্পাদক এস এম ফজলুর রহমান এবং কোষাধ্যক্ষ মহিদুল ইসলাম টাকার হিসেব বুঝে নেন।

২০১৬ সালে ( আজিজুর রহমান শাহীন-ফজলুর রহমানের কমিটি) যখন বর্তমান কমিটির (স্বপন কুমার কুন্ডু ও আব্দুল বাতেন) নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করে তখন ১০ লাখ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটের পরিবর্তে তারা ৭ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়ী হিসাবের ১ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ টাকার পরিবর্তে সঞ্চয়ী হিসাবে ৯৪০.২৩ টাকা এবং নগদ ৪,৩০৯ টাকা অর্থাৎ মোট ৭ লাখ ৫ হাজার ২৪৯ টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেয়। এছাড়া বিজ্ঞাপন বাবদ বকেয়া পাওনার কোন হিসাবই পাওয়া যায়নি। পূর্বের কমিটি ক্ষমতায় থাকাকালীন ফিক্সড ডিপোজিটের মুনাফা, বিভিন্ন সময়ে সাবেক ভুমিমন্ত্রী প্রদত্ত টিআর এবং অন্যান্য আয় স্বেচ্ছাচারিতার সাথে খরচ করে।

সাবেক কমিটির হিসাব নিয়ে গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি বারবার তাদের হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দিলেও তারা হিসাব বুঝিয়ে দেয়নি।

প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মিশুক প্রধান গত ৩০ শে জুন ২০২০ খ্রিঃ তারিখের ব্যাংক স্টেমেন্টের বর্ণনা দিয়ে জানান, ব্যাংক এশিয়ার ফিক্সড ডিপোজিটে এখনও ৭ লাখ টাকা এবং সঞ্চয়ী হিসেবে ৫ হাজার ৮১৬ টাকাসহ মোট ৭ লাখ ৫ হাজার ৮১৬ টাকা জমা আছে। ব্যাংক হিসাব সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। বিধায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ভাগ বাটোয়ারার খবর সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। এই ব্যাংক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে অপপ্রচারকারীদের মুখোশ উন্মোচন হলো।

প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার কুন্ডু জানান, পুর্বের কমিটি ক্ষমতা গ্রহণের সময় ১০ লাখ টাকা ডিপোজিট ফিক্সড ছিল। এর মুনাফার টাকায় ক্লাবের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের জন্য রাখা হয়েছিল। অথচ বিগত কমিটি সেই ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙ্গে ফেলেছিল। তারা আমাদের কমিটিকে ৭ লাখ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট বুঝিয়ে দিয়েছিল। সেই ৭ লাখ টাকা এখনো ফিক্সড ডিপোজিটে রয়েছে। অথচ টাকা ভাগ- বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি ওই সংবাদে আমাদের বক্তব্য নেয়া হয়নি যা সংবাদ প্রকাশের নীতিমালার পরিপন্থি।

তিনি আরো জানান, ৭ লাখ টাকার মুনাফা ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী মহোদয়ের নিকট হতে একবার প্রাপ্ত টিআর এবং আমরা নিজেরা অর্থের সংস্থান করে প্রেসক্লাব পরিচালানা করছি। সাংবাদিকতা আমাদের কেবিনেটের বেশীরভাগ সদস্যের মূল পেশা নয়। তাছাড়া বর্তমান কমিটির বেশীরভাগ সদস্যই উচ্চ শিক্ষিত ও অনেকেই পেশায় শিক্ষক। আমাদের কমিটির সদস্যদের উচ্চ শিক্ষিত হওয়াই অনেকের গাত্রদাহের কারণ। আর কোন উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আর্থিক কালিমা লেপনের হীন চক্রান্তে তারা লিপ্ত হয়েছে।

এই কার্যনির্বাহী কমিটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল কর্মসূচি, বুদ্ধিজীবি দিবস, জাতীয় শোক দিবস, জাতীয় শিশু দিবস এবং সর্বেেশষ মুজিব শতবর্ষ পালন উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারী’ উদ্বোধন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করেছে। প্রেসক্লাবের প্রত্যেক অনুষ্ঠানেই মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি এই কমিটি নিশ্চিত করেছে। ঈশ্বরদী প্রেসক্লাবের এসব কর্মকান্ড ঈশ্বরদীর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল রাজনৈতিক সংগঠন, উপজেলা পরিষদ, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ব্যবসায়ীসহ সকল সুধিজনদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২০)