রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দুলাল ঘোষ নামের এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার সকালে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ঝড়গাছা গ্রামের মুকুন্দ ঘোষের বেলগাছতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও পিবিআই ঘটনার তদন্তে নেমেছে।

নিহত দুলাল ঘোষ(৫২) সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন ঝড়গাছা গ্রামের পদ্ম ঘোষের ছেলে।

নিহতের স্ত্রী চায়না ঘোষ জানান, ছোট ছেলে সুজয় বাবাকে না জানিয়ে কিছু জমি বন্দক রেখে আট বছর আগেহ মালয়েশিয়ায় চলে যায়। এটা তার স্বামী দুলাল মেনে নিতে পারেননি। এ নিয়ে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক ভাল ছিল না।

একপর্যায়ে তিনি (চায়না), বড় ছেলে রমা ঘোষ ও পুত্রবধুকে নিয়ে কয়েক বছর আগে ভারতে চলে যান। এ সময় তার স্বামী বাড়িতে একাকী থাকতেন। ভারতে এক বছর থাকার পর তারা আবারো দেশে ফেরেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্বামী তাকে দু’ বছর আগে আদালতের মাধ্যমে ছাড়াছাড়ি করেন। এরপরও তিনি সংসারে ছিলেন।

চায়না ঘোষ আরো জানান, গত বছর তার স্বামী পাঁচপাড়ার ওয়াহেদ আলীর কাছে বন্দকী জমি ছাড়িয়ে নিয়ে তার(ওয়াহেদ) কাছে চার কাঠা জমি ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ওই টাকা সে একই গ্রামের ৮৭ বছরের বৃদ্ধ সুনীল ঘোষের মাধ্যমে সুদ খাটাতো। শুক্রবার সন্ধ্যার পর প্রতিদিনের ন্যয় বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন তার স্বামী। রাতে বাড়ি না ফেরায় বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করা হয়। সকালে মুকুন্দ ঘোষের বেলতলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ঝড়গাছা গ্রামের মোহিত কুমার ঘোষ জানান, নিহতের শরীরের মাথা ও মুখমণ্ডল ভারী জিনিস দিয়ে থেতলানো ছিল। তাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। শনিবার দুপুরে পুলিশ ব্যুরো ইনভেসটিগেশনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসেছিলেন।

ঝড়গাছা গ্রামের বৃদ্ধ সুনীল ঘোষ বলেন, বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় দুলাল তার বাড়িতে এসে খেয়ে চলে যান। শনিবার সকালে মুকুন্দ ঘোষের বেলতলায় তার লাশ দেখা যায়। দুলাল তার ৭৫ হাজার টাকা স্বপন ঘোষ ও চঞ্চল ঘোষের কাছে সুদে খাটালেও এক সপ্তাহ আগে টাকা তুলে নেন।

তবে স্থানীয়দের কয়েকজনের অভিযোগ, গত বছর প্রায় একই স্থানে নটবর ঘোষের ছেলে গোপাল ঘোষকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করলেও বিচার আলোর মুখ দেখেনি। ফলে ১০০ শতাংশ হিন্দু অধ্যষুতি ঝড়গাছা গ্রামে আতঙ্ক তৈরি করতে শুক্রবার রাতে দুলাল ঘোষের মত নিরীহ লোককে হত্যা করেছে একটি মহল।

পাটকেলঘাটা থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মোর্শেদ জানান, শুক্রবার রাতের কোন এক সময়ে মুখমণ্ডল ও মাথা থেতলানোর পর দুলালকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদও হাসপাতালের মর্গে ময়না নন্ত শেষে নিহকের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল চারটা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২০)