বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনের পাশের দুর্গম গ্রাম পশ্চিম রাজাপুর। সেখানে মিলন চৌকিদার ও তার সতালো পাঁচ ভাই মিলে এলাকায় রাম রাজত্ব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বঘোষিত সম্রাট দুর্ধর্ষ মিলন তার ভাইদের নিয়ে বাহিনী গড়ে তুলে নিয়ন্ত্রণ করছে এলাকার সব কিছু। হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল, নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা জাহির করতে মানুষকে অহেতুক মারধর, হামলা, হুমকি তাদের নিত্যনৈমিত্যিক ঘটনা। এমনকি গ্রামের কেউ বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে এলে তার ওপরও হামলে পড়ে ওই মিলন।

ওই গ্রামের সোমেদ হাওলাদার ওরফে সোমেদ চৌকিদারের (অবসরপ্রাপ্ত গ্রামপুলিশ) পাঁচ ছেলের গঠিত বাহিনীর নির্যাতনে এলাকার অনেক পরিবার এখন বাড়ি ছাড়া। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার ওপর শুরু হয় নির্যাতন। মিলনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা থাকলেও তারা বীর দর্পে চালিয়ে যাচ্ছে অনৈতিক কর্মকান্ড।

এমন অভিযোগে সরেজমিন সুন্দরবন ঘেঁষা ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর গ্রামে গেলে গণমাধ্যকর্মীদের দেখে এলাকার নিরীহ মানুষ একের পর এক মিলন বাহিনীর অপকর্মের বর্ণনা দিতে শুরু করে।

প্রবাসী সাখাওয়াত হোসেনের স্ত্রী ফাতিমা বেগম জানান, স্বামী প্রবাসে থাকায় তার ১২ বিঘা জমি জবর দখল করে নেয় মিলন তার ভাইয়েরা। এর প্রতিবাদ করায় তার আট বছরের ছেলে মুসাকে অপহরণের হুমকি দেয়। ছেলের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাদের ভয়ে ছেলেকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় বোনের বাড়িতে রেখে আসেন। এছাড়া, গত ১২ মে বাড়িতে হামলা চালিয়ে দেড় লাখ টাকা, একটি মোবাইল ফোনসেট, স্বর্ণের চেইন নিয়ে যায় তারা। এঘটনায় মামলা করলে তা তুলে নিতে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মিলন ও তার ভাইয়েরা।

দেলোয়ার হাওলাদারের স্ত্রী সেতারা বেগম (৫৮) জানান, মিলন বাহিনী তাকে মারধর করে তার চারটি দাঁত ভেঙে দিয়েছে। তাদের দুটি গরু ও হাঁস-মুরগী লুট করে নিয়ে যায়। তার ভাই হাফেজ হাওলাদারের ছেলের বউয়ের ওপর কুনজর পড়ে মিলনের। মানসম্মান ও প্রাণের ভয়ে এলাকা ছেড়ে তারা চলে যায়। সাখাওয়াত ও ইদ্রিস হাওলাদারের আড়াই বিঘা জমি ও মালেক হাওলাদারের তিন বিঘার বাড়ি দখল করে নেয় তারা।

বৃদ্ধ আইউব আলী আকন জানান, তার একটি গরু মিলনের বাড়িতে ঢুকে পড়ায় তাকে ধরে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।

ইউনুচের স্ত্রী হাসিনা বেগম মুঠোফোনে জানান, মিলনের অত্যাচারে তারা এখন গ্রাম ছাড়া। সম্প্রতি তিনি রাতে ঘরের বাইরে বের হলে মিলন তাকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনায় শরণখোলা থানায় মামলা দিলে তার স্বামীকে মেরে আহত করা হয়। মালেক হাওলাদার ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, মেঝ ছেলের বউয়ের ওপর মিলনের কুনজর পড়ে। এ কারণে বউকে চট্টগ্রামে ছেলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বউকে পাঠানোর অপরাধে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে তাদের।

স্থানীয় যুবক জাহিদ, বেল্লাল ও জাহাঙ্গীরসহ অনেকে বলেন, সাবেক গ্রাম পুলিশ সোমেদ হাওলাদারের একাধিক স্ত্রী। বিভিন্ন সংসারে আট ছেলের মধ্যে মিলন, নেহরুল, মনির, ছগির ও নজরুল খুবই দুর্ধর্ষ। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। এলাকার সমস্ত অপকর্মের হোতা তারা।

এ ব্যাপারে ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম টিপু, ইউপি সদস্য হুমাউন করিম সুমন তালুকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ছিদ্দিকুর রহমান জানান, সোমেদ চৌকিদারের ছেলে মিলন ও তার ভাইয়েরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।

ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতার ছত্র ছায়ায় থেকে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা, নিরীহ মানুষকে মারধর, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল করে আসছে। মিলনের নামে ভাইয়ের স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মামলাও রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে এলাকা ছাড়া করে তারা। তাদের এসব অপকর্মের কথা পুলিশকে জানানো হলেও কোন অদৃশ্য শক্তির জোরে যেনো তারা পার পেয়ে যায়।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ বলেন, ওই এলাকায় গ্রুপিং এবং দীর্ঘদিন ধরে জমিজমার বিরোধ ও মামলা চলে আসছে। যাতে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে নিয়ে সমোঝতার চেষ্টা চলছে।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে মিলনের কাছে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। মিলনের ভাই নেহারুল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে বিরোধ থাকায় তারা আমাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২০)