স্টাফ রিপোর্টার : মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) জটিলতায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সরবরাহকারীদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। এদিকে ভ্যাট কাঠামোর সুরাহার দাবিতে তারা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কর্মসূচির কথা ভাবছেন।

করোনাভাইরাসের মহামারিকালে যখন ভার্চুয়াল যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটে মানুষের নির্ভরতা অনেক বেড়েছে, তখন শনিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই হুমকি দিল আইএসপিএবি। এখন যে ভ্যাটের কাঠামো রয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে তাদের খরচ বাড়বে। এতে ক্রেতাপর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংগঠনটির।

আইএসপিএবির নেতারা বলছেন, ভ্যাট কাঠামোর একটি সুরাহার দাবিতে তারা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কর্মসূচির কথা ভাবছেন। হতে পারে সপ্তাহে একদিন-দুদিন দিনে এক ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে।

আইএসপিএবির সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন, সবকিছুই ঠিক করা হবে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে। তার আগে চলতি মাসের মধ্যে সরকার এ বিষয়ে একটি সুরাহা করবে বলে আশা করি।

শনিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমিনুল হাকিম। তিনি জানান, বর্তমানে সারাদেশে ৮০ লাখের বেশি বাড়িতে তারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি গ্রাহক।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেও কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বিল আদায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন। ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫% আরোপিত ভ্যাট নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৃষ্টি হওয়া জটিলতার কারণে চলমান ইন্টারনেট সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে আইএসপিএবি মনে করছে।

আমিনুল বলেন, ৫ শতাংশ ভ্যাট ইন্টারনেট গ্রাহক থেকে আদায় করে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো আর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাত আইএসপিগুলো থেকে আদায় করে থাকে। এর ফলে ৫ শতাংশ ভ্যাট গ্রাহক থেকে আদায় করা হলেও আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএনকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হচ্ছে। সবমিলে প্রায় ৩৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ খরচ দিতে হচ্ছে আইএসপিগুলোকে।

তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট নির্ধারিত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা খাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫% ভ্যাট আরোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। কিন্তু এর কয়েক মাসের ব্যবধানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেটে পুনরায় ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং অন্যান্য স্তরে ১৫% ভ্যাট আরোপ করায় বিষয়টিতে আবারও আগের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইন্টারনেটে ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য খাতে ১৫% ভ্যাট আরোপকে ‘বৈষম্যমূলক’ এবং মূসক আইনের ‘পরিপন্থী’ বলেও মনে করছে আইএসপিএবি।

ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইএসপিএবির প্রস্তাব তুলে ধরে আমিনুল বলেন, ইন্টারনেটের সকল ক্ষেত্রে ৫% অথবা ০% হারে ভ্যাট আরোপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে (ইন্টারনেট সেবায় ৫% ভ্যাট এবং ভ্যালু চেইনের অন্যান্য ১৫% ভ্যাট) জটিলতা নিরসন হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য ৩০% থেকে ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কাও দূর হবে। এর ফলে সর্বস্তরের ইন্টারনেট গ্রাহক ও দেশের জনসাধারণ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে ইন্টারনেট সেবার আওতায় আসতে পারবেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও দেশের সকল শ্রেণির জনগণের কথা বিবেচনা করে ইন্টারনেটে ভ্যাট জটিলতা নিরসন করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইন্টারনেটে ভ্যাট আরোপের পরিবর্তিত কাঠামোটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানায় আইএসপিএবি।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২০)