নিউজ ডেস্ক : চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) গোটা বিশ্বকে পরিণত করেছে মৃত্যুপুরীতে। উন্নত থেকে দুর্গত, সব জনপদে ফেলে চলেছে লাশের সারি। বাংলাদেশও ভুগছে এ ভাইরাসের ছোবলে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশে দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ভাইরাসটি। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও শত শত মানুষ।

সরকারি হিসাব মতে, যে দুই হাজারের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে প্রথম এক হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে ৮৫ দিনে, অর্থাৎ প্রায় তিন মাসে। আর দ্বিতীয় হাজারের মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২৫ দিনে। দিন দিন মৃত্যুর হার যেভাবে বাড়ছে, তা উদ্বিগ্ন করছে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান মতে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের তথ্য ৮ মার্চ জানা গেলেও প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। তারপর মৃতের সংখ্যা অল্প অল্প করে বাড়তে বাড়তে হাজার পেরোয় ৮৫তম দিনে অর্থাৎ ১০ জুন। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ যেমন বাড়ে, তেমনি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যা, তাতে মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় হাজার পেরোতে সময় লাগে মাত্র ২৫ দিন অর্থাৎ ৫ জুলাই দেশে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় দুই হাজার ৫২ জনে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রবিবারের (৫ জুলাই) সর্বশেষ তথ্যানুসারে, দেশে আট লাখ ৪৬ হাজার ৬২টি নমুনা পরীক্ষায় মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন, যা শতাংশের হারে ৪৪ দশমিক ৭২। আর দুই হাজার ৫২ জনের প্রাণহানি ধরে মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যানুসারে, আক্রান্তদের মধ্যে ৮৭ হাজার ৭৪০ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন, যা মোট রোগীর তুলনায় ৫৪ শতাংশ। শেষ ক’সপ্তাহে মৃত্যুর উদ্বেগজনক হারই চিকিৎসাধীন রোগী ও সম্ভাব্য নতুন রোগীদের নিয়ে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের কপালে।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার

করোনা উপসর্গে শত শত মানুষের মৃত্যু আর বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বাদ দিয়ে সরকারি হিসাব ধরলে, বাংলাদেশে মৃত্যুর হার প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের তুলনায় বেশ কমই।

ভারতে ছয় লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ জন রোগী শনাক্তের বিপরীতে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পাকিস্তানে দুই লাখ ২৮ হাজার ৪৭৪ জন রোগী শনাক্তের বিপরীতে প্রাণহানির হার ২ দশমিক ০৬ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও চীনে যথাক্রমে সোয়া ২৯ লাখ, দুই লাখ ৮১ হাজার এবং ৮৩ হাজার করোনা রোগীর বিপরীতে মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৫১, ১৫ দশমিক ৫১ এবং ৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

আর সারাবিশ্বে এক কোটি ১৪ লাখ রোগী শনাক্তের বিবেচনায় মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

সংক্রমণও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে

দেশে ক’সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর পাশাপাশি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণও। ৯ জুন থেকে শুরু করে গতকাল ৪ জুলাই পর্যন্ত একদিন বাদ দিয়ে প্রতিদিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি করে। এর মধ্যে তিন দিন শনাক্ত হয়েছে চার হাজারেরও বেশি রোগী। মাঝে ১৩ জুন তিন হাজারের কম রোগী শনাক্ত হয়। আর আজ ৫ জুলাইয়ের বুলেটিনে তিন হাজারের কম অর্থাৎ দুই হাজার ৭৩৮ রোগী শনাক্ত করার কথা জানানো হয়। যদিও আগের দিনগুলোর তুলনায় এ দিন নমুনা পরীক্ষাও হয়েছে কম। ২১ জুনের পর সবশেষ আজকের বুলেটিনে ১৪ হাজারের কম অর্থাৎ ১৩ হাজার ৯৮৮টি নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হয়। এই দুই সপ্তাহে এর আগে সবচেয়ে কম নমুনা পরীক্ষা হয় ৩ জুলাই, ১৪ হাজার ৬৫০টি।

দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সম্প্রতি চীন সফর করে যাওয়া মেডিকেল দলের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা এবং দ্রুত আইসোলেশন ও দ্রুত চিকিৎসার কথা বলেছেন। কিন্তু এ পরামর্শ মানার বালাই নেই বলেই দেশে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার এমন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৫, ২০২০)