শিতাংশু গুহ 


কোভিড-১৯ এর কারণে সপ্তাহান্তে বাইরে যাওয়ার সুযোগ সংকুচিত, তাই ঘরে থাকা, বা টুকিটাকি কাজ করা? হটাৎই বলতে হবে, গ্যারাজে একটি পুরানো ভাঙ্গা আলমারিতে অধিকতর পুরানো ঢাকার কয়েকটি কাগজ ও ম্যাগাজিনের কিছু কিছু অংশ খুঁজে পেলাম। লক্ষ্য করে দেখলাম, সবই প্রায় আশির দশকের শেষভাগের। সবগুলো কাগজেই কিছু নিউজ মোটা কালি দিয়ে চিহ্নিত? এমনিতে লেখা বা কাগজ সংগ্রহ করায় আমি অভ্যস্ত নই, তাই বুঝতে অসুবিধা হলোনা যে, এগুলো ছিলো আমার আমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতির অংশ। কারণ চিহ্নিত প্রায় সকল নিউজে আমার নাম ছিলো? ভাবলাম, এনিয়ে লিখি না, হোক আমার বিষয়, তবু এতে সমসাময়িক কিছু চিত্র পাওয়া যাবে।

প্রথম যে কাগজটি হাতে নেই, সেটি দৈনিক বাংলারবানী, মঙ্গলবার ২৮শে জুলাই ১৯৮৭ সাল। মাত্র তেত্রিশ বছর আগের কাগজ। পুরো পত্রিকা নেই, আছে শুধু প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম ও অষ্টম, অর্থাৎ মোট চার পৃষ্ঠা। বোঝা যায়, মধ্যের পাতাগুলোর প্রয়োজন ছিলোনা, তাই ফেলে দেয়া হয়েছে। দেশে তখন বন্যা হচ্ছে, তাই চার কলাম লিড্ নিউজ ‘বন্যায় ৪জনের মৃত্যু।। পরিস্থিতির অবনতি’, পাশে তিন কলাম শেখ হাসিনার ছবি, ১৫ দলীয় শোক সভায় ‘কল-রেডী’র মাইকে বক্তব্য রাখছেন। সাথে নিউজ, হেডিং: ‘শহীদের রক্তের বদলা নেবোই নেবো’: হাসিনা। ঠিক নিচে সংযুক্ত সংবাদ: ‘বর্তমান সরকারের দিন ফুরিয়ে গেছে’: খালেদা।

যে সংবাদের জন্যে পত্রিকাটি আমেরিকা আসার সৌভাগ্য অর্জন করেছে, সেটি হচ্ছে, “বাংলারবানীতে যৌথ সভার ঘোষণা/ এ আঘাত রুখতে হবে” শীর্ষক একটি সংবাদ। এটি বাংলারবানী বন্ধ হবার আগের ঘটনা। এরশাদ সরকার বাংলারবানীকে ‘কারণ দর্শাও’ নোটিশ দিয়েছিলো। এ মিটিং ছিলো সেই নোটিশের প্রতিবাদে। তিন কলাম হেডিং’র নীচে ৪-কলাম ছবি, ব্যানারে লেখা, ‘বাংলারবানী বন্ধের সরকারি ষড়যন্ত্র রুখে দাড়াও’। নীচে ক্যাপশনে লেখা, ‘বাংলারবানী বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলারবানী প্রেস শ্রমিক, কর্মচারী ও সাংবাদিকরা রাজপথে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন’।

প্রথম পাতার বা-দিকে লিডের ঠিক নিচে নিউজটি হুবহু এ রকম: ষ্টাফ রিপোর্টার: বাংলারবানীর ওপর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে যে আঘাত করা হয়েছে, তাতে শুধু বাংলারবানীই নয়, সমগ্র সংবাদপত্রের ওপরই আঘাত করা হয়েছে। এ আঘাত রুখতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাংলারবানীকে দেয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের প্রতিবাদে গতকাল বাংলারবানী কার্যালয়ে সাংবাদিক, প্রেস ও কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের এক সভায় বিভিন্ন বক্তা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জনাব আওলাদ হোসেন এতে সভাপতিত্ব করেন।

বক্তব্য রাখেন, বাংলারবানীর যুগ্ন সম্পাদক আজিজ মিসির; সহকারী সম্পাদক শফিকুল আজিজ মুকুল; বিএফইউজে’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাফর; ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ; সহ-সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন; প্রচার সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ; বাংলারবানীর সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার দিলীপ চক্রবর্তী; এসএম শাহাবুদ্দিন; আব্দুল আউয়াল ঠাকুর; দলিলউদ্দিন আহমেদ; শাহাবুদ্দিন তালুকদার; তানভীর আহমেদ ও মোঃ জামাল উদ্দিন। সভার প্রস্তাব পাঠ করেন শিতাংশু গুহ।

সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে আজ মঙ্গলবার ২৮শে জুলাই’র মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায় কর্তৃক বাংলাবানীকে দেয়া নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয়ার দাবি জানানো হয়। তা না হলে বাংলার জনগণকে সাথে নিয়ে সংগ্রামের (শেষ পৃষ্টার ২য় কলামে দ্রষ্টব্য) কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। (এখানে আজিজ মিসির; সৈয়দ জাফর; আবুল কালাম আজাদ ও শেখ মহিউদ্দিনের সামান্য বক্তব্য আছে, তা দেয়া হলোনা)। সভাশেষে সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিবাদ মিছিল বাংলারবানী থেকে বের হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত যায় এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন শিতাংশু গুহ। মিছিলটি পুনরায় বাংলারবানী কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

তখনকার দিনে দৈনিক পত্রিকাগুলো ছিলো ৮-পাতার, মূল্য ২টাকা। প্রথম পাতায় সব গুরুত্বপূর্ণ নিউজ থাকতো, শেষের পাতায় ঐসব নিউজের ভগ্নাংশ, সাথে অল্প-বিস্তর নিউজ, অনেকটা গুরুত্বহীন। এখন কেউ আর তা করেনা। প্রথম ও শেষ উভয় পাতা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলারবানীর প্রিন্টার্স লাইনে তখন নাম ছিলো, সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এবং সম্পাদক, শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এ দিনের পত্রিকায় প্রথম পাতার নিচে ছিলো তিন কলাম বক্সে ওবায়দুল কাদের’র ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ-৫৪’ শীর্ষক ধারাবাহিক লেখা।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।