ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পাবনা সিভিল সার্জন বা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার অনুমোদন না নিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে (আরএনপিপি) কর্মরত রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান টেস্ট রোশেমসহ অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদানের অভিযোগে ঈশ্বরদীর রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে তাকে আটক করা হয়। থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে ৪১৮,৪১৯ ও ৪০৬ ধারায় মামলা দায়ের করে পাবনা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেখ নাসীর উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

থানা সুত্রে জানা যায়, রূপপুর মেডিকেয়ার কিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানা এবং নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার নটাবাড়িয়া গ্রামের আরশেদ আলী সরকারের ছেলে সুজন আহমেদ পরস্পর তিন দিন ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান কোম্পানি টেস্ট রোশেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকদের করোনা পরীার জন্য ফটু মার্কেট এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার মাঠে তাবু টাঙ্গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেন।

এই নমুনা তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এরপর অন-লাইনে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিকের ঠিকানায় রিপোর্ট আসে। নিয়ম অনুযায়ী করোনার নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। জেলা সিভিল সার্জনের অনুমতিতে সেগুলো নির্ধারিত পিসিআর ল্যাবে যাবে। রিপোর্টগুলোও সিভিল সার্জন অফিস কিংবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে।

কেউ কেউ প্রতিটি রিপোর্টের জন্য ৫/৬ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ জানান। তবে টাকা গ্রহনের কোন রশীদ দেখাতে পারেননি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ৫০টি রিপোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান তাদের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকলেও করোনা পরীক্ষার বাবদ এখনও কোন টাকা প্রদান করা হয়নি বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের গত ৫ই জুলাই থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পে কর্মরত টেষ্ট রোশেমসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীর নমুনা সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হলেও দ্বিতীয় দিনেই বন্ধ হযে যায়। করোনা টেস্টের প্রাপ্ত রিপোর্টগুলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান ডাক্তার আবু সাইদের স্বাক্ষর রয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাক্তার আবু সাইদ মুঠোফোনে জানান, রূপপুর মেডিকেয়ার কিনিকের মালিক আব্দুল ওহাব রানাকে আমি চিনি না। ওই নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আসা ৫০ জনের নমুনা টেষ্টের সঠিক রিপোর্ট আমরা গত ৬ই জুলাই তারিখে পাঠিয়েছি। সরকারী অনুমোদন না নিয়ে রূপপুর মেডিকেয়ার এই কাজ করছে তা আমাদের জানা ছিল না। টেষ্ট রিপোর্টগুলো সঠিক জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পুর্বে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক সম্পর্কে খোঁজ খবর না নিয়ে কাজ করাটা আমাদের ভুল হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: এফ এ আসমা খান জানান, উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে করোনার নমুনা সংগ্রহের স্টিক বা এ্যাম্পুলের তীব্র সংকট। এই পরিস্থিতিতে অনুমোদন না নিয়ে রূপপুর মেডিকেয়ার ক্লিনিক কিভাবে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান করছে তা আমার জানা নেই।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসীর উদ্দিন জানান, রূপপুর মেডিকেয়ার কিনিকের মালিক অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে করোনা পরীক্ষার জন্য আরএনপিপিতে কর্মরত শ্রমিকদের নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান করেছে। পাবনা সিভিল সার্জন অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। অনুমতি না নিয়ে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট প্রদান প্রতারণার সামিল। তাই আটক আব্দুল ওহাব রানাসহ দোষীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে পাবনা জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মেডিকেয়ারের পরিচালক আরিফুল বারী কিরণ জানান, রাশিয়ান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেষ্ট রোশেম, নিকিমথ ও রুইনওয়াল্ডের অনুরোধে আমরা করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টেষ্টের ব্যাবস্থা করা হয়।

পূর্ব অনুমতি না নেয়ার অভিযোগ সাঠিক নয় বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ নমুনা সংগ্রহের জন্য আমাদের একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনে নমুনা সংগ্রহের সময় কাজ বন্ধ করে দিয়ে মালিককে আটক করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

যে ৫০ জনের রিপোর্ট আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পাওয়া গেছে তা শতভাগ সঠিক জানিয়ে তিনি আরো বলেন, পরীক্ষার জন্য আমরা কোন শ্রমিকের নিকট হতে টাকা গ্রহন করা হয়নি। পরীক্ষার টাকা প্রতিষ্ঠান হতে প্রদানের কথা রয়েছে। বিধায় পরীক্ষার জন্য ৫/৬ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে তিনি দাবী করেছেন।

(এসকেকে/এসপি/জুলাই ০৯, ২০২০)