রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ভারতের ঘোজাডাঙায় বসে সুন্দরবনের মাছ ধরা জেলেদের অপহরণের পর জিম্মি করে মুক্তিপন হিসাবে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা গ্রহন করে আসছিল একটি চক্র। এই চক্রটিকে চিহ্ণিত করে তাদের কয়েক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সাথে মুক্তিপণ পরিশোধ করে ফিরে আসা তিন জেলেকেও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা শহরের কয়েকজন বিকাশ এজেন্ট এই কাজে জড়িত। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা এই অপরাধ করতো বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

পুলিশ সুপার জানান, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মির্জা সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের একদল পুলিশ বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে কিভাবে ভারতে টাকা পাচার করা হতো তা তদন্ত করতে গিয়ে ভারতে বসে মুক্তিপনের টাকা লেনদেনের প্রমান পান। তিনি আরও বলেন সম্প্রতি একজন জেলেকে হত্যার পর চক্রটি প্রচার দিয়েছিল তিনি পানিতে পড়ে মারা গেছেন। এসব বিষয় তদন্ত করতে গিয়ে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে।

পুলিশ সুপার জানান এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত শহরের মুনজিতপুরের মামুনুর রহমান খোকাবাবু, দেবহাটার খেজুরবাড়িয়ার আলাউদ্দিন গাজী, শহরের সুলতানপুরের তৈয়েবুর রহমান কামরান এবং রহমান এন্টারপ্রাইজের মোঃ সাইদুর রহমান সাইদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জানিয়েছে- বাংলাদেশের নাগরিক প্রদীপ ও তালা উপজেলার কুমিরা গ্রামের মিঠুন দাস এবং ভারতীয় নাগরিক ত্রিমোহিনী গ্রামের আক্তার আলম গাজী, একই গ্রামের পান্না, বাপ্পি এবং ঘোজাডাঙার হাসান এন্টারপ্রাইজের নুনু এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাদের রয়েছে একটি টর্চার সেল। তাদের কাছে বাংলাদেশের বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে মুক্তিপনের টাকা পাঠানো হয়। যতক্ষণ টাকা না পাঠানো হয় ততক্ষণ ধরে জেলেদের টর্চার সেলে আটক রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারপিট ও নির্যাতন করা হয়।

পুলিশ সুপার জানান পুরো এই চক্রটি জেলেদের অপহরন করে মুক্তিপনের নামে টাকা আদায় করে তা ভারতে পাঠিয়ে আসছে। এ ঘটনায় সাইদুর রহমান সাইদ, মামলার ভিকটিম এশার আলী ও সাক্ষী হারিজ হোসেন তুহিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

পুলিশ সুপার দাবি করেন সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে এখনও জলদস্যুদের ৫টি গ্র“প সক্রিয় রয়েছে। তারা মাছ ধরা জেলেদের অপহরন করে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। পরে তাদের হত্যা করছে অথবা মুক্তিপন নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মির্জা সালাউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল ইসলাম জিয়া , সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৯, ২০২০)