স্টাফ রিপোর্টার : বাজারে মাঝারি মানের এক কেজি চাল ৪৫ টাকার মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। এ হিসাবে তিন কেজি চাল কিনতে লাগবে ১৩৫ টাকা। আর বাজারে এক কেজি টমেটো কিনতে লাগছে ১২০-১৫০ টাকা। অর্থাৎ এখন এক কেজি টমেটো দিয়ে তিন কেজি চাল কেনা সম্ভব।

শুধু টমেটো নয়, বাজারে এখন সব ধরনের সবজির দাম বেশ চড়া। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে একশ টাকার ওপরে। একশ টাকার কাছাকাছি বেগুন, বরবটি। দুই-একটি বাদে বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। কাঁচা মরিচের কেজি দুইশ টাকা ছুঁই ছুঁই।

সবজির এমন চড়া দামে দিশেহারা নিম্ন আয়ের মানুষ। এর সঙ্গে মাছ, মাংস সবকিছুর দাম চড়া। মহামারি করোনার প্রকোপে এমনিতেই আয় কমেছে। বেকার হয়েছেন অনেকে। এ পরিস্থিতিতে দ্রব্য মূল্যের বাড়তি দাম নিম্ন আয়ের মানুষের চোখের পানি নাকের পানি এক করে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে অনেকে কোনো রকমে ভর্তা ভাত খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

মালিবাগ হাজিপাড়া বৌ-বাজারে সবজি কিনতে আসা আয়েশা খাতুন বলেন, আগে দুইটা বাসায় কাজ করতাম। করোনার কারণে দুই বাসার কাজই বন্ধ। এ মাস থেকে একটি বাসার কাজ শুরু করেছি। স্বামী রিকশা চালায়। তারও আয় তেমন নেই। সব মিলিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হচ্ছে। মালিক এক টাকাও ছাড় দেয় না। গ্রামের বাড়িতে চলে যাবো তারও উপায় নেই। গ্রামের বাড়িতে জমিজমা নেই। ছোট দুটি বাচ্চা আছে। তাই ঢাকাতেই খেয়ে না খেয়ে পড়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো জমানো টাকা নেই। যা ছিল তা গত তিন মাসে শেষ হয়ে গেছে। মাসে যা আয় হয় তার বেশিরভাগই বাসা ভাড়া দিতে হয়। মাংসের যে দাম, গত ঈদের পর আর মাংস খাওয়া হয়নি। চাল, সবজির দামও অনেক বেশি। বেশিরভাগ দিনে আলু ভর্তা ডাল দিয়ে ভাত খাই। এখন আবার আলুর দামও বেড়েছে। সামনে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।

শুক্রবার (১০ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মান ও বাজার ভেদে পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা। গাজরের কেজি ৮০-১১০ টাকা। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা।

টমেটো, গাজর, বেগুনের এমন চড়া দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, টমেটো ও গাজরের মৌসুম শেষ। মজুত করা কিছু মাল এখন পাওয়া যাচ্ছে। তাও খুব সীমিত। এ কারণে দাম বেশি। আর বেগুন চাষ হলেও সরবরাহ কম। বৃষ্টিতে অনেক খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে বেগুনের দামও অনেক বেশি।

শুধু এ তিন সবজিই নয় বাজারে এখন সব ধরনের সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভেদে বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। চিচিংগা ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, পটল ৩০-৫০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঝিঙা ৫০-৬০ টাকা, কচুর লতি ৪০-৬০ টাকা, কচুর মুখী ৬০-৭০ টাকা, কাকরোল ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা।

সবজির দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী জহির বলেন, কম দামে সবজি খাওয়ার দিন শেষ। শীতের আগে সবজির দাম কমার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। বরং সামনে সবজির দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ বন্যা ও বৃষ্টিতে অনেক সবজি খেতে নষ্ট হয়ে গেছে।

সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। বাজার ভেদে কাঁচা মরিচের পোয়া (২৫০ গ্রাম) ৩০-৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ডিম ও মুরগির দামও চড়া। ডিমের ডজন ১০০-১০৫ টাকা। বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি ২২০-২৫০ টাকা এবং পাকিস্তানি সোনালী মুরগি ২৭০-২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

গরু ও খাসির মাংস নিম্ন আয়ের মানুষের কপাল থেকে উঠে গেছে অনেক আগেই। গরুর মাংস ৫৮০-৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি।

মাছের বাজারেও স্বস্তি নেই। তবে অন্য মাছের তুলনায় কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে পাঙাস ও তেলাপিয়া। এর মধ্যে পাঙাস ১২০-১৭০ টাকা এবং তেলাপিয়া ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে রুই মাছের কেজি ২০০-৪০০ টাকা। পাবদা ৫০০-৬০০, কাঁচকি ২৫০-৩৫০, সরপুঁটি (চায়না পুঁটি) ১৬০-২৫০, দেশি পুঁটি ৫০০-৭০০, টেংরা ৬০০-৭৫০, শিং ৩০০-৫০০ এবং চিংড়ি ৪০০-৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আর আগের মতোই এক কেজি সাইজের ইলিশ ১০০০-১২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৫০০-৭৫০ গ্রামের ইলিশ ৭৫০- ৮০০ এবং ছোট ইলিশ আকার ভেদে ৩০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, করোনার কারণে প্রথমদিকে মাছের চাহিদা কম থাকায় দামও কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এখন মাছের চাহিদা বেড়েছে। সামনে মাছের দাম আরও বাড়বে। কারণ বন্যায় অনেক পুকুর ভেসে গেছে। এর একটা প্রভাব বাজারে শিগগির পড়বে।

রামপুরা বাজার থেকে পটল ও কাঁচকলা কেনা মিলন বলেন, মাছ, মাংস, সবজির দাম অনেক বেশি। কিছুটা কম দামে পটল ও কলা কিনলাম। সবজির পাশাপাশি এ দুটির খোসা ভর্তা করেও খাওয়া যায়। চেষ্টা করছি যতটুকু সেভ করে চলা যায়।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১০, ২০২০)