স্টাফ রিপোর্টার : ট্রেড লাইসেন্স ঘি প্যাকেজিং ও সরবরাহের, কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা ঘি সংগ্রহ করে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তা নিজেদের বলে বিক্রি ও রফতানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান নিউ বাঘাবাড়িকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

প্রতিষ্ঠানটির মালিবাগ কার্যালয়ে শনিবার (১১ জুলাই) দুপুরে অভিযান শেষে নিরাপদ খাদ্য আইন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ওই জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানের সহযোগিতায় ছিল র‌্যাব-৩।

অভিযানে অংশ নেয়া সংশ্লিষ্টরা জানান, সংগৃহীত ঘি অননুমোদিতভাবে নিজের ব্র্যান্ডের বলে প্রচার, চটকদার বিজ্ঞাপন ব্যবহার এবং জাতীয় পতাকার সিল ব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়া ঘি রফতানির অভিযোগে ঘি নিউ বাঘাবাড়ি’র মালিক সমির ঘোষকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযান শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নাম নিউ বাঘাবাড়ি, এর মালিক সমির ঘোষ। প্রতিষ্ঠানটির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে প্যাকেজিং ও সরবরাহকারী হিসেবে। কিন্তু বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘি’য়ের প্যাকেট ও সরবরাহ করে পণ্যের গায়ে লিখছেন তিনি নিজেই উৎপাদনকারী। আইনে এটার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মূলত সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কিনে নিয়ে আসেন। যা নিজের উৎপাদিত বলে চালিয়েছেন, যা প্রতারণা।

‘দ্বিতীয়ত নিজের ঘি’য়ের প্যাকেটের গায়ে বেশ কিছু পুষ্টিগুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি করতে পারেন না। কারণ তার ব্র্যান্ডের ঘি’য়ের পুষ্টিগুণের ল্যাব টেস্ট বা ল্যাব সার্টিফায়েড না। তৃতীয়ত: তিনি ঘি’য়ের মতো একটি রুচিশীল পণ্যের প্যাকেজিংটা করেন করছিলেন অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে ‘

‘চতুর্থত: নিরাপদ খাদ্য আইনে স্পষ্ট বলা আছে যে, কোনো প্রোডাক্টের কাঁচামাল যেখান থেকে কিনে নিয়ে আসবেন সেখানকার চালান সংরক্ষণ করতে হবে। তার গোডাউনে প্রচুর কাঁচামাল রয়েছে কিন্তু তিনি একটি মাত্র চালানের কপি দেখাতে পেরেছেন। পঞ্চমত: তার অফিস থেকে বেশ কিছু স্টিকার উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে লেখা তিনি সিডনিতে ঘি রফতানি করেন। অথচ তার এক্সপোর্ট লাইসেন্স নেই। অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যদি ঘি রফতানি করেন তাহলে ল্যাব টেস্ট সার্টিফায়েড হতে হবে, কাস্টমসের ছাড়পত্র লাগবে। অননুমোদিত ঘি রফতানি করলে দেশের বদনাম হবে। যদিও তিনি সেটা করে আসছিলেন।’

‘ষষ্ঠত: তিনি তার ঘি’য়ের কৌটায় বাংলাদেশের পতাকার সিল ব্যবহার করেছেন। ইতোপূর্বে এমন প্রতারণা কখনো দেখা যায়নি। ঘি ব্যবহারের পর ওই কৌটা মানুষ ফেলে দিতে পারে। এতে পতাকার অবমাননা হয়। এভাবে অনুমোদন ছাড়া পতাকার ছবি বা সিল ব্যবহার পতাকা আইনে অপরাধ। সপ্তমত: মালিকের ঘি’য়ের ব্র্যান্ডের নাম সমির ঘোষ। কিন্তু তিনি এর সাথে ‘সমির ঘোষের স্পেশাল গাওয়া ঘি’ লিখেছেন। এমন চটকদারি বিজ্ঞাপনের ব্যবহার মানুষকে প্রতারণা করার শামিল। কারণ তার এটার অনুমোদন নেই। গাওয়া ঘি কিন্তু আরও ইমপ্রুভড ও অধিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ হয়।’

পলাশ কুমার বসু বলেন, এসব অভিযোগের কোনোটারই সদুত্তর দিতে পারেননি সমির ঘোষ। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ভোক্তা সংরক্ষণ আইন ও নিরাপদ খাদ্য আইনের বিভিন্ন ধারায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। তিনি নগদে ১০ লাখ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ আরও বলেন, জব্দ করা ৫ রকমের ঘি’তে কোনো কেমিক্যাল রয়েছে কি-না, যা খালি চোখে দেখা যায় না। তা পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই ল্যাবে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি পরীক্ষায় অস্বাস্থ্যকর ও কেমিক্যাল জাতীয় কিছু মেলে তাহলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১১, ২০২০)