নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে যার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান এদেশের কৃষকের। সাথে রয়েছে সরকারের কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা। সারা পৃথিবীতে করোনার থাবা পড়াতে অর্থনীতি আজ চরম বিপর্যস্ত। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে একথা সত্য যে এ করোনাকালেও সব কিছু বন্ধ থাকার পরও অন্তত না খেয়ে মানুষ মারা যায়নি। অনেক গবেষকরাই বলেছিলেন করোনা চলাকালে বাংলাদেশে দেখা দিবে দুর্ভিক্ষ। তবে কথা হলো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও আজও অর্জিত হয়নি নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা। যার ফলে মানুষ ভেজাল খাদ্য খেয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অকালে মৃত্যুবরণ করছে। বাজার আজ ভেজালকৃত পণ্যে ভরপুর। অপর্যাপ্ত বাজার নজরদারির কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে।

শিশু খাদ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যেখানে ভেজালের গন্ধ নেই। খাদ্যে ভেজাল মানুষকে চোখের অন্তরালে তিলে তিলে ধংস করছে। মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতি উপজেলায় একটি করে মোট ৫৫৬টি স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের / নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক পদ সৃজন করেন। যা দিয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত চলে আসছে সারাদেশের প্রায় ২৫ লাখ খাদ্য স্থাপনার দেখাশুনা করার দায়িত্ব। কোন নির্দিষ্ট অফিস এবং আর কোনো কর্মচারী ছাড়াই জোড়াতালি দিয়ে চলে আসছে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হলেও জনবল সংকটের কারণে মুখ থুবরে পড়েছে জনগণের নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার অধিকার।

সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। ৫৫৬ জন স্বাস্থ্য বিভাগের ও ৮৩ জন স্থানীয় সরকারের জনবল নিয়ে বিশাল এ কর্মযজ্ঞকে আইসিওতে রাখা হয়েছে। এমনকি এখনও দেশের বেশ কয়েকটি উপজেলা, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, খ ও গ শ্রেণির পৌরসভা, নতুন সিটি কর্পোরেশন, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্থল বন্দর, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও কার্যালয়, জাতীয় সংসদভবন, সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বা এলাকায় এখনও পদসৃজন হয়নি।

ইতোমধ্যে মাত্র ৩৫টি পদ সৃজন করা হয়েছে যা অত্যন্ত অপ্রতুল। অন্যদিকে ৩-৪ বছর মেয়াদী ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রায় ২ হাজার ২শত স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী পদ না থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন। সরকার কোটি কোটি টাকা প্রশিক্ষণের পিছনে ব্যয় করলেও পদ না থাকায় এসব ব্যয় গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের। অনেকেই প্রশিক্ষণ শেষে পদ না থাকায় চাকুরির মেয়াদ পূর্ণ করে অবসরের দিনক্ষণ গুনছেন।

পদায়ন হলেও কোনো প্রকার বেতন বৃদ্ধি না হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় আবার অনেকেই এ পদে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। ইতোমধ্যে স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরা সংবাদ সম্মেলন, স্বারকলিপি, গোলটেবিল বৈঠক, আলোচলা সভা, রিট ও কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাত করেছেন। পদসৃজন করে তাদের দাবী যথাযথ বাস্তবায়ন করে মানুষের মুখে নিরাপদ খাদ্য তুলে দিতে সরকারের অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।


লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।