রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি’র কাছে সাতক্ষীরার দেবহাটার ইজিবাইক চালক মনিরুল হত্যা মামলার যথাযথ তদন্ত, দোষীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

সোমবার দুপুরে মামলার বাদি ও নিহত মনিরুলের ভাই আমিনুর রহমান ডিআইজি’র সঙ্গে দেখা করে এ আবেদন জানান। ডিআইজি ড.খন্দকার মহিতউদ্দিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিমকে নির্দেশ দিয়েছেন।

দেবহাটার শিমুলিয়া গ্রামের মৃত ইসমাইল গাজীর ছেলে আমিনুর রহমান তার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন যে,গত ২৫ জুন তার ভাই মনিরুলকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার ইজিবাইক ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে পরদিন কারো নাম উল্লেখ না করে দেবহাটা থানায় মামলা করেন।

এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক উজ্জ্বল কুমার মৈত্র নিহত মনিরুলের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন, তার প্রেমিক একই উপজেলার কামটা গ্রামের সাঈদুৃর রহমান রাজু ও মনিরুলের শ্বাশুড়ি শ্রীপুর গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে ২৭ জুন আটক করেন। একইভাবে পরদিন কামটা গ্রামের সুমন, সাংবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ ও শিমুলিয়া গ্রামের জুহুরুল ইসলামের ভাগ্নে আব্দুর রাজ্জাক ও ৩০ জুন দিবাগত রাতে কালিগঞ্জ উপজেলা নলতা ইউনিয়নের সোনটিকারী গ্রামের শহর আলী সরদারের ছেলে রমজান আলীকে আটক করে। তবে পুলিশ কোন আটকের কথা স্বীকার করেনি।

একপর্যায়ে সাঈদুর রহমান রাজুর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের কারণে রাবেয়াকে বিয়ের জন্য মনিরুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা কথা স্বীকার করে ২ জুলাই রাজু ও রাবেয়া বিচারক বিলাস কুমার মন্ডলের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তবে জবানবন্দিতে হতাকান্ডে অংশ নেওয়া তৃতীয় ব্যক্তি সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করেনি তারা। ইতিমধ্যে গত ১০ জুলাই সকালে পুলিশ গাজীরহাট বাসস্টান্ড থেকে ৩০ জুন রাতে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্য পরিচয়ে আটককৃত রমজান আলীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি দুপুরে কামটা গ্রামের একটি মাছের হ্যাচারির পুকুর থেকে ইজিবাইকের ৩টি চাকা, ১টি হ্যান্ডেল ও ইজিবাইকের ছাদ উদ্ধার কওে তা মনিরুলের বলে পুলিশ দাবি করে।

উদ্ধারকৃত ইজিবাইকের যন্ত্রানাংশগুলো প্রথমে দেখতে পান দেবহাটা সদরের এক ইউপি সদস্য ও বিজিবি সদস্য জব্বর হত্যার মামলার চার্জশীটভূক্ত আসামী ও কমপক্ষে ২ ডজন মাদক মামলার আসামী দেবহাটা সদর ইউপি সদস্য আরমান আলী। ঐ আরমান আলী তাকে (বাদী) গত ০৯ জুলাই দিবাগত রাত ০১.৪৮ মিনিটে তাকে মোবাইল ফোনে বলে যে মনিরুল হত্যা মামলার ২জন আসামী আছে বলে তাকে চলে আসতে বলে দেবহাটায়।

পুকুর মালিকরা প্রতিদিন জাল ফেলেন ও পুকুওে নেমে খাবার দেন তারা জানেন না অথচ আরমান মেম্বর কীভাবে ১টি বাগানের মধ্যে পুকুরের পানির মধ্যে ঐ ইজিবাইকের যন্ত্রানাংশ দেখতে পেল তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তাছাড়া রাজুর দোকানের কর্মচারি রমজান আলীকে ১০ দিন পূর্বে আটকের পর স্বীকারোক্তির নামে যেভাবে নির্যাতন করে ১১ জুলাই আদালতে পাঠানো সম্পর্কিত প্রতিবেদন বিভিন্ন গণ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে নেপথ্যে থাকা হত্যাকারিদের পুলিশ আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে তার মনে হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবর রহমান ও আরমান মেম্বর এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। কারণ হিসেবে ২০১৩ সালে নিরীহ মনিরুলকে আলমগীর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করিয়ে স্ত্রীর রাবেয়ার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, প্রতিবাদ ও সাংবাদিক সম্মেলন করায় বাবাকে মারপিট ও পুত্রবধু রাবেয়াকে দিয়ে শ্বশুর ইসমাইল গাজীর বিরদ্ধে ধর্ষণের মামলা করানোসহ নেপথ্যে আরো ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মনিরুলকে হত্যা করতে রাজু ও রাবেয়াকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে ভাড়াটিয়া গুণ্ডা নিয়োগ কওে থাকতে পারেন মুজিবর।

মুজিবর রহমান কৌশলে আরমান মেম্বরকে দিয়ে চেচিজ ও ইঞ্জিন বাদ দিয়ে ভাঙড়ির দোকান থেকে ইজিবাইকের চাল, তিনটি চাকা ও একটি হ্যাণ্ডেল কিনে পুকুরে ফেলে গাড়িটি মনিরুলের বলে চালানোর চেষ্টা করে পুলিশ তদন্তে সফলতা দাবি করছে। অথচ মুজিবরের প্রভাবে রাজুর সঙ্গে অপরিচিত ব্যক্তিটি কে যে হতাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল ও মনিরুলের মালিকাানধীন ইজিবাইকটি কোথায় তা গত ১৬ দিনেও জানতে পারেনি। এজন্য ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি করা হয়।

জানতে চাইলে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল করিম সাংবাদিকদেও বলেন, ডিআইজি সাহেবের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই তিনি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৩, ২০২০)