স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে দেশের ১৭টি জেলায় বন্যা চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ মানুষ। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এ তথ্য জানান।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলমান বন্যা ২৩ জেলায় বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলে জানান এনামুর রহমান।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধিটা অব্যাহত থাকবে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় পানির সমতল কমছে, এটা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি আরিচা পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলার পানি কমবে। এ সময় নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও রংপুরের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, নওগাঁ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’

‘বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আমাদের আরও জানিয়েছে যে, গত ২৭ জুন থেকে যে বন্যা শুরু হয়েছিল সেটা আগাম বন্যা ছিল, সেটা ৬/৭ তারিখ থেকে উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু ১১ জুলাই থেকে আবার পানি বেড়েছে। পানি ১৭ জুলাই পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাড়বে। সেই বৃদ্ধিটা আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ স্থায়ী হবে। ২৩টি জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে।’

মেঘালয়, চেরাপুঞ্জী, আসাম, ত্রিপুরা, চীন ও নেপালের পানি এসে দেশে এই বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

এই মুহূর্তে বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১৭টি, জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মোট বন্যা আক্রান্ত ইউনিয়নের সংখ্যা ৪৬৪টি, পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৪ হাজার ২৭৪টি, বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন।’

তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে যাতে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে যেতে পারে সেজন্য বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে আট হাজার ২১০ টন চাল, দুই কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গো-খাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্য কেনার জন্য ৪৮ লাখ টাকা আমরা দিয়েছি। কোথাও কোথাও নদী ভাঙনে ঘর ভেঙেছে, এজন্য ঘর মেরামতে ৩০০ বান্ডিল ঢেউটিন, নয় লাখ টাকা নগদ দিয়েছি।’

‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, এবারের বন্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করে খাওয়া কষ্টকর হতে পারে। সেজন্য তিনি সব ডিসিকে নির্দেশ দেয়ার জন্য বলেছেন। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়ার জন্য বলেছেন, যাতে ১৯৯৮ সালে রুটি বানিয়ে সবজি ও অন্যান্য সামগ্রি দিয়ে যেভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছিল, সেভাবে যেন করা হয়। আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।’

এনামুর রহমান বলেন, ‘সেই অনুযায়ী আমি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি, ওনাকে বলেছি, বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য। তিনি আজ বিকেলে ধানমন্ডির কার্যালয়ে সভা করবেন এবং সেখানে নির্দেশনাটা দিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’

‘আমি মনে করি, আমাদের মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যদি ত্রাণ প্রস্তুত ও বিতরণের কাজে অংশগ্রহণ করেন তাহলে অতীতে যেমন বড় বড় বন্যা মোকাবিলা করেছি, একইভাবে এবারও মোকাবিলা করতে পারব, মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে পারব।’

ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে ১২টি জেলা বেশি বন্যা কবলিত এবং আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, আশ্রয় কেন্দ্রে লোক উঠেছে, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি, শুধু রান্না করা খাবার তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য।’

ইতোমধ্যে এক হাজার ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেখানে ২০ হাজার ১০ জন আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানান এনামুর রহমান।

‘সরকারের ত্রাণ সহায়তা চালিয়ে যাওয়ার মতো সক্ষমতা আছে’ জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আরও যত বড় দুর্যোগ আসুক না কেন, দুর্যোগ যত দীর্ঘস্থায়ী হোক না কেন, দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার মতো সক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা সরকারের আছে।’

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২০)