ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সীমান্তবর্তী হরিপুর উপজেলার যুবক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদিার বাড়িটি যেন সংস্কার করা হয়। আর এর জন্য তারা নানা রকম কর্মসূচীও পালন করেছিল । তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ময়লা স্তুপে পরিণত হওয়া সেই জমিদার বাড়িটি পরিস্কার করেছিল নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে। রোপন করেছিল ফুলের বাগান। পর্যটকদের কিছু সংখ্যক আনাগোনাও বেড়েছিলো সে সময়ে। শিক্ষার্থীরা ভেবেছিলো যদি হরিপুর জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা না হয় তাহলে এই জমিদার বাড়িটি এক সময় ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তাদের জোর দাবি ছিলো যেন অতিদ্রুত হরিপুরের বহু পুরোনো এই জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা হয়। 

সংস্কার করা হবে এই কথাটি সান্ত্বনার বাণীতে আটকে থাকায় আর সংস্কার করা হয়নি। তাই সেই শিক্ষার্থীদের শঙ্কা বাস্তবে রুপ নিয়েছে। এ বর্ষায় কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারনে জমিদার বাড়িটির একটি অংশ ধ্বসে পড়েছে। সেই সাথে ধ্বসের ছাপ পড়েছে সে সব শিক্ষার্থীদের মনে। যারা এক বুক আশা নিয়ে প্রাণের হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িটি আগলে রাখতে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে সংস্কার কাজে নেমেছিল।স্থানীয় সচেতন মানুষজন বলছে, বাপ-দাদাদের কাছে থেকে হরিপুর জমিদার বাড়ির গল্প শুনতাম। কিন্তু যত্নের অভাবে এই জমিদার বাড়িটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।

সংস্কারের জন্য স্থানীয় যুবক, কিশোর ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জোর দাবিও তুলেছিলো কিছুদিন আগে। তারা নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এক পা এগিয়ে গিয়েছিলো বাড়িটি সংস্কার করতে। কিন্তু তারা সরকারের তরফ থেকে কোন রকম কোন সহযোগিতা পায়নি, সংস্কারের সান্ত্বনার বাণী ছাড়া।

অনেকে উদ্যমী হয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করেছিল। অনেকেরই প্রথম দিকে স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিলো সে কাজে। যারা আজ তারা হতাশায় ডুবে যাচ্ছে। অনেকে কান্নাও করছে। কারন তাদের কোন কিছু চাওয়ার ছিলো না শুধু মাত্র তাদের শ্রমকে গুরুত্ব দিয়ে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করা ছাড়া।

এছাড়াও বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও নিউজ পোর্টালে এবং বেসরকারি টেলিভিশনে হরিপুরের জমিদার বাড়িটি সংস্কারের দাবিতে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে। তাতেও টনক নড়েনি কারো। শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এমন গাফিলাতির কারনে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এমন প্রন্ত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন।

হরিপুর জমিদার বাড়িটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজের নেতৃত্ব দাতা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো: সালমান ফার্সি বলেন, বলার আসলে কোনো ভাষা নাই। যখন দেখলাম জমিদার বাড়িটি ধ্বসে গেছে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। কি করি নাই এর সংস্কারের দাবির জন্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর পর্যন্ত গিয়েছি। সব জায়গায় বলা হলো সময় লাগবে। আজ আমার মতো তরুণদের প্রাণের স্পন্দন জমিদার বাড়ী ধ্বংসের দারপ্রান্তে, কই সবাই। আর ধৈর্য ধরবো না। এবার সরাসরি আন্দোলনে রাস্তায় নামবো। হরিপুরে যারা প্রতিনিধিত্ব করছে সে সব প্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে যে অবহেলার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যি হতাশাজনক। এখন যদি তাদের লজ্জা না হয়, তারা কাজ না করে তাহলে একটি কথাই বলব গায়ের চামড়া তারা অন্য কোথাও রেখে এসেছে। তারা থাকার পরও আমাদের এসব নিয়ে কাজ করতে হয়।

একটা সরকারের সম্পত্তি নষ্ট হচ্ছে সেটা ঠিক করবে তাতে নাকি ভেজাল আছে। এসব পাগলের প্রলাপ বলে তারা নিজেদের কি প্রমাণ করে তা আর বলতে চাই না। পরিশেষে একটাই বলব ঈদের আগে যদি জমিদার বাড়ীর কাজ না শুরু হয় তাহলে আমরা দানের টাকায় কাজ শুরু করব। আর সব বিকৃত মানসিকতার মানুষদের দেখিয়ে দিবো। তবে কাজ অবশ্যই অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই হবে। আমরা এরই মধ্যে অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। অনুমতি পেয়ে যাব আশা করি। অনেক হয়েছে আর এসব সহ্য করব না।

এভাবে যুবকদের যৌক্তিক কর্মকান্ড যদি মুখ থুবরে পড়ে যায় তাহলে যুবকরা সমাজ পরিবর্তনের চিন্তাও করবেনা। এখন তো শুধু হরিপুর জমিদার বাড়ি ধ্বসেছে। এমন অবহেলা বহমান থাকলে যুবকদের মনে ধ্বস নামবে আর সমাজেও ধ্বস নামবে। তাই আমি দ্রুত এই জমিদার বাড়িটি সংস্কারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল করিম বলেন, প্রশাসনের পক্ষ হতে সংস্কারের উদ্দ্যোগ নেওয়ার জন্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করণে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আদেশ পেলে সংস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের অধীনে থাকার কারণে আমরা সংস্কার করতে পারি নাই।

(এফআর/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২০)