জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় বেড়েছে ৬৪ সেন্টিমিটার। ইতোপূর্বে পানি একদফা কমলেও দ্বিতীয় দফায় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। জেলার ৭টি উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ২৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তবে দুর্গতদের মাঝে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, পানি বৃদ্ধি প্রথম দফার রেকর্ড ভেঙেছে। সর্বত্রই এখন পানি। কোথাও শুকনো জায়গা নেই। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ আশ্রয়ে খুঁজে বেরিয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় এখন তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যা দুর্গত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে আগে থেকে তারা কর্মহীন ছিল। এই অভাবের মধ্যে বন্যা যোগ হওয়ায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষজন। ঘরে পর্যাপ্ত খাবার নেই। অনেকে খাবারের অভাবে চিড়া-মুড়ি খেয়েও থাকছেন। দুর্গত এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র, সেতু ও উঁচু স্থানে যেতে শুরু করেছেন। বানের পানিতে ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়া অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় কবলিত। মঙ্গলবার দুপুরে দেওয়াগঞ্জ পৌর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভার সিংহভাগ এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়ক গুলোতে ৩-৪ ফুট পানি থাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না অধিকাংশ এলাকায়। পানি বন্দি হয়ে পড়ায় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ ও ভূমি অফিসসহ কয়েকটি সরকারি দফতর। বিভিন্ন বাজারে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে রয়েছে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেওয়ানগঞ্জ পৌর এলাকা ও ৮ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। একই চিত্র জেলার প্রায় সব কয়েকটি উপজেলায়।

দেওয়ানগঞ্জ বেলতৈল বাজারের বাসিন্দা মো: মোজাম্মেল হক জানান, এবার ২য় দফা হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কোনো রকম প্রস্তুতি ছিলো না তাদের। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন তারা।

কয়েকজন যানবাহন চালক জানান, হঠাৎ করে বন্যার পানি আসায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। তাই এখন গাড়ি না চালানোয় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে তাদের। তাই তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ত্রাণের দাবি জানান।

ত্রাণের বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে । পর্যায়ক্রমে ত্রাণের যোগ্য সকলকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

পানি বৃদ্ধির বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং এই বন্যা ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২০)