রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তার নামে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়া ছয় নারীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা আব্দুল বারীর দেওয়া মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। সোমবার রাতেই এ মামলা রেকর্ড করে ছয় নারীসহ এক শিশুকে আদালতে পাঠানো হয়।

মামলায় ছয়টি নাশকতা মামলার আসামী ও ঝাউডাঙা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক রুকন আব্দুল বারী উল্লেখ করেছেন যে, ২০০৪ সালে জমি কিনে সেখানে গাছগালি ও ঘরবাড়ি বানিয়ে ভোগ দখলে ছিলেন তিনি। সোমবার সকাল ৯টার দিকে ওয়াড়িয়া গ্রামের আ আবুল বাশার, মোশাররফ হোসেন, আছরম আলী, আকবর আলীসহ কয়েকজন তার জমিতে জোরপূর্বক দখল করিতে গেলে তার ছেলে নুর আনাম বাধা দেয়। এ সময় তাকে ও তার আত্মীয় কবীরকে মারপিট করা হয়। লুটপাট করা হয় মোবাইল ফোন। ভাঙচুর করা হয় লক্ষাধিক টাকার মালামাল।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. তামিম আহম্মেদ সোহাগ বলেন, সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে গ্রেপ্তার দেখানো মুন্নি খাতুন, হালিমা বেগম, ফতোম বেগম, লায়লা বেগম, আশুরা বেগম ও খায়রুন্নেছাকে শিশু সুমাইয়াসহ মঙ্গলবার দুপুরে জামায়াত নেতা আব্দুল বারির দায়েরকৃত মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। তারা আদালত থেকে বিকেলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিরোধপূর্ণ জমি ও ঘরবাড়ি দখল করতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন পাঁচটি নাশকতার মামলার আসামী বারি মোল্লা, দু’টি নাশকতার মামলার আসামী ও মহিলা রুকন জাহানারা, তার ছেলে ছয়টি নাশকতার মামলার আসামী আবুল বাসার ও চারটি নামখতার মামলার আসামী নুর আনাম। অতিরিক্ত জেলা মেজিষ্ট্রেট এর আদেশ, আইনজীবীর মতামত ও স্থানীয় শালিসের সিদ্ধান্ত না মেনে জামায়াত নেতা আব্দুল বারী গত সোমবার সকাল ৯টায় বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাসার, মোশারফ, আকবর ও জামেলার বাড়িতে হামলা চালায় । এ সময় তাদের ঘরের মধ্যে ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।

পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয় বৃদ্ধা জামেলা, আকবর আলী, আশরাফের ছেলে শরিফুল ইসলাম, আশরমের ছেলে আরিফুল, ইসমাইলের স্ত্রী মাজেদা ও আবুল হোসেনের স্ত্রী হালিমাকে। দুপুরে পুলিশের সহায়তার জামায়াত নেতা বারি মাজেদার ঘর বাড়ি দখল করবে এমন খবর পেয়ে জামেলা ও শরিফুল ব্যতীত চারজন হাসপাতাল ছেড়ে বাড়িতে চলে যান। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহউদ্দিন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নেতৃত্বে কয়েকজন মহিলা পুলিশসহ ৩৫/৪০ জন পুলিশ জামিলার বাড়িতে আসে।

সাবেক ইউপি সদস্য রজব আলী ও তার ছেলে শুভ’র সহায়তায় মহিলা পুলিশ তাদের বাড়ির মধ্যে অবস্থানরত লায়লা খাতুন, ফতেমা খাতুন, হালিমা খাতুন, আশুরা, শিমু মুন্নি, শিশু স্মৃতি ও ভ্যান চালক আগলঝাড়ার টোটোকে টেনে হিচড়ে রাস্তায় নিয়ে ভ্যানে তোলে। ঘর থেকে বের করার পর কয়েকজন পুরুষ পুলিশ সদস্য নারী ও শিশুদের লাথি মেরে উঠানে ফেলে দেয়। বাড়ি লোকজন শূন্য করার পর পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালামের নির্দেশে বারী মাওলানা ওই ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়। দুটি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকজন সাংবাদিককে।

যদিও পুলিশের নিন্দনীয় আচরনের ২৩ মিনিটের ভিঙিও চিত্র একটি ছাদ থেকে ধারণ করা হয়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান সাংবাাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাউকে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে বারী মোল্লার ঘর দখল করিয়ে দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, যে কোন সময় সংঘর্ষ হতে পারে। তাই দু’জন শিশু ও কয়েকজন নারীকে ১৫১ ধারা প্রয়োগ মতে নিরাপত্তা দিতে থানায় আনা হয়েছে। আদালতের রায় ছাড়া যাতে কোন পক্ষ ওই ঘরে যেতে না পারে সেজন্য তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে শান্তিরক্ষার নামে থানায় তুলে আনা ছয় নারীসহ ১৩ জনের নামে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলা রেকর্ড করার ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১৪, ২০২০)