রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসের হাট এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ভূমিদস্যু আলতাফ হোসেন হাওলাদার ও আরেক গ্রুপের উপজেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন খলিফা। এরা দুজনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। এই গ্রুপের হামলা-মামলায় পুরুষ শূন্য ওই ইউনিয়নের দুই গ্রাম।

আলতাফ হোসেন হাওলাদার কুয়েতে মানব পাচারের মামলায় গ্রেপ্তার এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের অনুসারী হওয়ায় এমপি পাপুল ও আলতাফ হাওলাদারসহ তাঁর বাহিনীর বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবীতে গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলা পরিষদের সামনে ঘন্টা ব্যাপি মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।

মামলা এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুয়ের গ্রেফতার এমপি পাপুলে পক্ষে কথা না বলা ও সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১১ জুলাই রাতে এ হামলা ও ভাংচুরের আলতাফ হোসেনের নেতৃত্বে তাঁর বাহিনীর ৫০/৬০ জনের একদল যুবক স্থানীয় আওয়ামীলীগ দলীয় কার্যালয় ও ১৫টি বসতবাড়ি হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন ফলীফা, নাদিম, সবুজ হাওলাদার, মাইনুদ্দিন, সোহাগ দেওয়ান, আব্দুল কাদের ও জুলহাসসহ ২০ জনকে কুপিয়ে গুরুত আহত করে আলতাফ বাহিনীর লোকজন। এ হামলা ও ভাংচুর থেকে বাদ যায়নি নারী এবং শিশুও।

আহতরা বর্তমানে রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর ও ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন ফলীফার পক্ষ থেকে আলতাফ হোসেনসহ গ্রুপের আড়াই থেকে তিন শতাধিক জনকে আসামী করে দু’টি মামলা হলেও এখন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো আলতাফ হোসেন হাওলাদারের পক্ষ থেকে থানায় পাল্টা একটি কাউন্টার মামলা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা রহুল আমিন ফলীফাসহ গ্রুপের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে চরবংশী ইউনিয়নের খাসের হাট গ্রাম বর্তমানে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত শ্যামা আক্তার, রেশমা বেগম, আবদুৃল আজিজ, সিদ্দিক খলিফা ও সেলিম খলিফাসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল ও তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলামের সমর্থকদের হামলা-মামলা ও হুমকি-ধুমকির ভয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে এখানকার আ,লীগের নেতাকর্মীরা। এমপি পাপুলের ক্ষমতার দাফটে আলতাফ হোসেন তাঁর বাহিনী নিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। এমপি পাপুল মানবপাচার ও অর্থপাচারে কুয়েতে গ্রেপ্তার থাকলেও তার স্ত্রী সংরক্ষিত আসনের এমপি কাজী সেলিনা ইসলামের ইন্ধনে এ হামলা ও ভাংচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সে পলাতক থাকায় তাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ বলেন, এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল কুয়েতে গ্রেপ্তার হলেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন বন্ধ হচ্ছেনা। বিশেষ করে তার স্ত্রীও এমপি। এমপির প্রভাব বিস্তার করে দলীয় কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা ও ভাংচুর চালানো হচ্ছে। টাকা দিয়ে লাটিয়াল বাহিনী তৈরি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। এঘটানার দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান তারা।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল জানান, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। এ বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা।

(এস/এসপি/জুলাই ১৭, ২০২০)